সন্দেহ ও আগুন ধ্বংসে সমান শক্তিশালী এবং মিল আছে!

সন্দেহ ও আগুন ধ্বংসে সমান শক্তিশালী এবং মিল আছে!

সন্দেহ যে কতটা মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক আমরা তা কখনও ভেবে দেখি না। ক্ষতি বা ধ্বংস সাধনে সন্দেহ ক্ষমতার দিক থেকে প্রায় আগুনের সমান। আমার কথায় হয়তো আপনারা আশ্চর্য হবেন। কিন্তু এটাই ব্যস্তবতা। যুক্তি আছে বিধায় এ ধারণা বা মতকে অনেকেই সমর্থন করি। এ বিষয়ে নীচে কিছুটা আলোকপাত করছি যাতে আপনাদের সাথে আমি কিছুটা ধারণা শেয়ার করতে পারি। আমাদের জীবনে যত জটিলতার সৃষ্টি হয় তার অর্ধেক জটিলতা শুধু মাত্র সন্দেহ থেকে সৃষ্টি হয়। কত সংসার ভেঙ্গে গেছে। প্রিয়জন, বন্ধু ও আপনজন দূরে সরে গেছে। কত ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে এবং কত পরিবারের মাথা যে সন্দেহের কারণে নীচু হয়েছে তার হিসেব নেই।

সন্দেহ ও আগুন ধ্বংসে সমান শক্তিশালী এবং মিল আছে!

কারো মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে তৃতীয় পক্ষের সাহায্য বা মনের সন্দেহ প্রবণ দিকের প্রয়োজন। আগুন জ্বালাতে হলেও দ্বিতীয় কোন মাধ্যমেরর সাহায্য নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে মানুষকেই আগুন জ্বালাতে হবে। অথবা আগুন জ্বালাতে সহায়ক উপাদান তাপ, অক্সিজেন বা দাহ্য পদার্থের প্রয়োজন হবে। আগুন বাহিরের দিকে পোড়ায় আর সন্দেহ মনের ভিতরে অদৃশ্য ভাবে পোড়ায়। দুটোর কাজই জ্বালানো। আগুন ঘর, বাড়ী, দালানকোটা, ইমারত, বন, জঙ্গল ইত্যাদি জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। একই সাথে তা মানুষকে নিঃস্ব করে পথে বসায়। অন্য দিকে সন্দেহ মনের মধ্যে জমতে জমতে এক সময় বিরাট আকার ধারণ করে। যা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রকে সম্পুর্ণ ভাবে ধ্বংস করে দেয়।

সন্দেহ ও আগুন ধ্বংসে সমান শক্তিশালী এবং মিল আছে!

সন্দেহ এর বীজ ব্যক্তিগত জীবন, কর্মক্ষেত্র, সংসার জীবন, ব্যবসা বানিজ্য ইত্যাদিতে ধ্বংস লীলা চালায়। তবে সব চেয়ে বেশী ক্ষতি হয় দাম্পত্য জীবনে, প্রেমের বন্ধনে এবং পরিবারের সম্পর্কের ক্ষেত্রে। আপনি যেমন আগুন ধরা প্রতিরোধে হাজারো ব্যবস্থা নিয়েছেন। ঠিক তেমন ভাবে নিজের মনের ভিতরেও সন্দেহের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। পারস্পারিক বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করতে শিখুন। অতি সামান্য বিষয়ে বাঁকা চোখে বা সন্দেহের চোখে দেখার খারাপ মানসিকতা পরিহার করুন। তবে কেউ সন্দেহ করবে আমি তেমন কাজ করার পক্ষেও সায় দিচ্ছি না। বরং তেমন পরিস্থিতিতে সকলের উচিত প্রকৃত বিষয় সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করা। তখন আর সে বিষয়ে সাধারণত কেউ সন্দেহ করবে না।

সন্দেহ ও আগুন ধ্বংসে সমান শক্তিশালী এবং মিল আছে!

আমাদের বাস্তব জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থা নিয়ে আমরা হয়তো দুর্ঘটনা থেকে সার্বিক ভাবে রক্ষা পেতে পারি। কিন্তু সন্দেহ সৃষ্টির মাধ্যমে মন, মানসিকতা, পারিবারিক, সমাজ বা রাষ্ট্রের যে ক্ষতি হয় তা অপুরণীয়। সন্দেহ নামক দৈত্যটি যতটা না বৃহৎ কলেবরে ক্ষতি করে তার চাইতে বেশী ক্ষতি করে ব্যক্তিগত জীবনে। সুন্দর নির্মল বন্ধুত্বের সম্পর্ক এক জনের সাথে আর এক জনের। এখানে আপনি তৃতীয় পক্ষ হিসেব দূর থেকে দেখে কত না হাজারো জল্পনা কল্পনা শুরু করে দিলেন। শুরু হলো অশান্তি ও ধ্বংসের খেলা। নিজের অজান্তেই আপনি সন্দেহ নামক বিষ পান করে ফেললেন। আমাদের বিশ্বাস ও আস্থায় পরিপক্কতা থাকা উচিত!

আমরা সব সময় চেষ্টা করি, আমাদের যা আছে তার চেয়ে কিছুটা বেশী পাবার। অথবা লোভের বশঃবর্তী হয়ে আমাদের যা কিছু আছে তার চেয়ে অধিক কিছু বাঁকা পথে উপার্জনের চেষ্টা করি। আবার শুধু মাত্র মনের অতৃপ্ত কামনা চরিতার্থ করার ইচ্ছার ফলে অনেক সময় সন্দেহ নামক দোষের শিকার হই। প্রয়োজন যখন নতুন কিছু সৃষ্টির, তখন সেখানে হাজারো কথা ওঠে। যেখানে যা প্রয়োজন তার অধিক কিছু পাবার চেষ্টা বা আশা করার ফলে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। সন্দেহই সার্বিক ভারসম্য নষ্ট করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী। তবে কারও মধ্যে সার্বিক ভারসম্য বজায়ের মানসিকতা থাকলে, সে ক্ষেত্রে সন্দেহের সুযোগ একটু কম থাকে।

তৃতীয় পক্ষ যেন আপনার আমার মনে সন্দেহ ঢুকাতে না পারে সে ব্যাপারে সচেতন থাকা প্রয়োজন। তবে দ্বিধা সৃষ্টি হলে তা মাথায় রেখে প্রমাণ যোগার করুন। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবেন। যে কোন বিষয় ও পরিস্থিতিতে সুস্পষ্ট কারণ থাকলে তবেই সন্দেহের বিষয় আসে, অন্যথায় নই। সারা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে কেউ কারো দিকে তাকানোর সময় পর্যন্ত পায় না। সেই তুলনায় আমরা বাঙ্গালী অবাধ সুযোগ পেলে অনর্থ সৃষ্টির মত কাজ যে করবো না, এটা অসম্ভব ব্যাপার। সুতরাং সবদিকেই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। সর্বোপরি সব কিছুতে সন্দেহের মানসিকতা পরিহার করুন, দেখবেন ভালো থাকবেন, সুখে থাকবেন।

Leave a Reply