যৌতুক প্রথা, সামাজিক অবক্ষয় ও পরিবার ধ্বংসের কারণ!

যৌতুক প্রথা, সামাজিক অবক্ষয় ও একটি পরিবার ধ্বংসের অন্যতম কারণ।

যৌতুক প্রথা, সামাজিক অবক্ষয় ও একটি পরিবার ধ্বংসের অন্যতম কারণ। ছেলেকে বিয়ে দিয়ে মেয়ের পরিবার হতে অর্থ এবং উপহার আদায় এক নোংরা প্রবৃত্তি। লোভ এবং স্বার্থের কারণে এ দেশের সমাজ ব্যবস্থা আজও যৌতুক প্রথার অভিশাপ মুক্ত হয়নি। যৌতুক বা উপঢৌকন অথবা ডিমান্ড হতে পারে কোন এক স্বচ্ছল পরিবারের সখ। কিন্তু এটা একই সাথে হাজার হাজার পরিবারের কান্না। সন্তান হিসেবে ছেলে মেয়ে উভয়ই বাবা মায়ের কাছে সমান। একটি ছেলে বিয়ের পর তার নিজ বাড়ীতে থাকে। সেখানে সে নিজ স্বচ্ছল পরিবারের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। তাই সব বাবা মা চায়, মেয়ে তাদের কাছ হতে যেন এমন সুবিধার কিছুটা হলেও পায়।

যৌতুক প্রথা, সামাজিক অবক্ষয় ও একটি পরিবার ধ্বংসের অন্যতম কারণ।

এ পরিস্থিতিতে এটি একটি স্বচ্ছল পরিবারের সখের বিষয়। এ সখ এক সময় সীমাহীন কালো ডানা মেলে অনেক পরিবারকে অন্ধকারে ঢেকে ফেলে। তখন যৌতুক দেয়া অদৃশ্য এক সামাজিক রীতি ও নিয়মে পরিণত হয়। আর এটাকে পুঁজি করে ছেলের অভিভাবক উপঢৌকন নেয়াকে তাদের অধিকার মনে করে। ছেলেকে বিয়ে দিয়ে তারা ব্যবসা করার সুযোগ পায়। বর্তমান সমাজে উপঢৌকন এখন কোন সখ নই, বরং মেয়ের পরিবারের উপর চাপিয়ে দেয়া অমানবিকতার স্টীম রোলার। একটি ভাল ছেলে বা পরিবারে মেয়ের বিয়ে দেবার সময়। মেয়ের বাবা মা মেয়েকে ইচ্ছে করে কিছু গয়নাপাতি বা নগদ অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তখনই ছেলের পরিবারের জিহ্বা লোভে লক লকিয়ে ওঠে।

যৌতুক প্রথা, সামাজিক অবক্ষয় ও একটি পরিবার ধ্বংসের অন্যতম কারণ।

মেয়ের পরিবার ছেলের পরিবারের হাতে বিয়ের সময় নগদ অর্থ তুলে দিতে পারলে খুব ভালো। কোন কারণে মেয়ের বাবা সে যৌতুক দিতে না পারলে। শুরু হয় ছেলে বউ এর প্রতি অমানবিক মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন। শাশুড়ী ছেলের বউকে বলে, অমুকের বউ বাপের বাড়ী থেকে এতো ভরি স্বর্ণ, এটা সেটা এনেছে, তুমি কি এনেছো। ছেলের বউ ঘর গোছাতে গেলে কথা তোলে এসব আমাদের, পারলে বাপের বাড়ী হতে জিনিস এনে গোছাও। স্বামী যদি চাকুরী করে তবে, আকারে ইঙ্গিতে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ব্যবস্যা করে খাবে। ইত্যাদির মাধ্যমে তার যে টাকার দরকার তা বউকে জানান দেয় ও যৌতুক নেয়ার লোভে বাবা মায়ের বাধ্য ছেলে সাজে।

যৌতুক প্রথা, সামাজিক অবক্ষয় ও একটি পরিবার ধ্বংসের অন্যতম কারণ।

বিভিন্ন অজুহাতে ছেলের বাবা মা মেয়ের বাবা মায়ের সাথে চালাকী করে নোংরা আচরণ শুরু করে। তাদের ভাব এমন, ছেলেকে দিয়ে ব্যবসা করার জন্য তাকে জন্ম দিয়েছে। ছেলেকে মানুষ করার যাবতীয় খরচ মেয়ের পারিবার হতে যৌতুক নিয়ে উসুল করার জঘণ্য মানসিকতা দেখায়। তবে সমাজের সামনে ও আইনগত কারনে ছেলের অভিভাবক বরাবরই, আমরা কিছুই চাইনা জাতীয় কথা বলে থাকেন। আবার একই সাথে বাড়ী করা বা এ জাতীয় কাজের কথা বলে ছেলের অভিভাবক অদৃশ্য ভাবে অর্থের ইঙ্গিত দেন।

শুধু যৌতুকের অর্থের জন্য স্ত্রীকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন যেন সমাজের নিত্য দিনের চিত্র। মাঝে মাঝে আগুনে পুড়ে মারা, এসিডে ঝলসে দেয়া, আত্মহত্যায় বাধ্য করার মত ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। সমাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয় রোধে সবাইকর যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার করে আইনের মাধ্যমে কঠিন ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিলে এ অমানবিক অনাচার কমবে।

Leave a Reply