ভুল ক্ষমাপ্রার্থী এবং ক্ষমাকারী, উভয় মহৎ চরিত্রের!

 ভুল ক্ষমাপ্রার্থী এবং ক্ষমাকারী, উভয় মহৎ চরিত্রের!

ভুল যে করে এবং যে ভুল ক্ষমা করে, উভয়ই মহৎ চরিত্রের। মানবিকতা দেখিয়ে এবং সব দিক বিবেচনায় যিনি ভুল ক্ষমা করেন, তিনি মহান। একই সাথে তিনি অত্যন্ত উত্তম চরিত্রের অধিকারী। আসলে ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। মানুষের চরিত্রে যতগুলো ভালো চারিত্রিক গুনাবলী আছে তার মধ্যে ক্ষমা অন্যতম। স্বাভাবিক ভাবে সব সময় ক্ষমার প্রয়োজন হয় না যেখানে ক্ষমা করা প্রয়োজন, সেখানে ক্ষমা না করলে সার্বিক বিপর্যয় আসতে পারে। কে ক্ষমা পাবে, সেটা একটা গুরুত্বপুর্ণ বিবেচনার বিষয়। সব ভূলই কি ক্ষমার যোগ্য। কোন ভুল ক্ষমা করলে পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হবে না তো! এ সকল বিষয় বিবেচনায় রেখে বুদ্ধির প্রয়োগ করতে হবে।

 ভুল ক্ষমাপ্রার্থী এবং ক্ষমাকারী, উভয় মহৎ চরিত্রের!

অনেক ক্ষেত্রে কেউ ভুল করলে তার পরিবর্তে যদি ক্ষমা করা হয় তবে সে ক্ষেত্রে ক্ষমা উল্টো দুর্বলতাতে পরিণত হয়। যার ফলে অনেকে ইচ্ছে করে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার একই ভুল করে। এমন পরিস্থিতে কষ্ট হলে বা নিজের খারাপ লাগলেও ভুলের জন্য শাস্তি দেয়া উচিত। এতে করে সবাই যে কোন কাজ করার আগে বার বার চিন্তা করবে। ফলে ভুলের পরিমান কমে যাবে। আবার অনেকেই শাস্তির ভয়ে একই ভুল দ্বিতীয় বার করার সাহস পাবে না। ক্ষমা যেখানে দুর্বলতার রূপ নেয় সেখানে প্রয়োজনে কঠোর হওয়া সবারই একান্ত কর্তব্য। এ কঠোরতা আবার সব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে আমাদের সংশোধনের পথ বন্ধ হয়ে যায়।

 ভুল ক্ষমাপ্রার্থী এবং ক্ষমাকারী, উভয় মহৎ চরিত্রের!

মানুষের চরিত্রের ভালো গুণের মধ্যে উত্তম দুটি গুণ হলো নিজের ভুল স্বীকার করা এবং ক্ষমা করা। আসলে ভুল হলে স্বীকার করা ও ভুল ক্ষমা করা একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। একজন নিজের ভুল বুঝতে পেরে তা অকপটে স্বীকার করেন। এর বিপরীতে অন্যজন মহানুভবতার কারণে তা ক্ষমা করে দেন। দুটোতেই চারিত্রিক কোমলতা প্রকাশ পায়। ভুল ক্ষমা করার ফলে পরবর্তীতে বড় জটিলতা সৃষ্টি হয় না। সবার মনেই এক ধরণের শান্তি বিরাজ করে। তবে শ্লীনতাহানি, খুন, জখম ইত্যাদি অপরাধ গুলো স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ক্ষমার অযোগ্য। এ সব অপরাধ কোন ভাবেই ক্ষমা করা উচিত নই।

 ভুল ক্ষমাপ্রার্থী এবং ক্ষমাকারী, উভয় মহৎ চরিত্রের!

কেউ যদি পরিবার, সমাজ, ধর্ম, জাতি বা রাষ্ট্রের ক্ষতি করে। অথবা খুন, ধর্ষণের মত পাপ করে তবে তা কোন ভাবেই ক্ষমা করা উচিত নই। এ সব ক্ষেত্রে বিচারের মাধ্যমে সমুচিত সাজা দেয়া উচিত। তবে কেউ যদি অপরাধ করার পর স্বীকার করে অনুতপ্ত হয় ও অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে। সে ক্ষেত্রে ঠিক যতটুকু ক্ষমা প্রাপ্য তাই দেয়া উচিত। এখানে সহানুভূতি দেখানো কোন ভাবেই ঠিক না। কারণ এ সব অপকর্ম জঘণ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য। যেমন কেউ একজনকে হত্যা করে অপরাধ স্বীকার করলো আর এতে সে অপরাধীর প্রতি সবার দরদ দেখানো।

ভুল এবং অপরাধ কখনই এক নই, এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। সাধারণত কোন কাজ করার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করলে তাকে ভুল বলে। এটা একই ভাবে সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ভুলের কারণে বিপরীত অথবা শুন্য ফলাফল আসে এবং সার্বিক ক্ষতি বা লোকসান হয়। পক্ষান্তরে মানুষ ইচ্ছা করে যদি সমাজ, পরিবেশ, রাষ্ট্র বা মানবতা বিরোধী কোন কাজ করে তবে তা অপরাধ। প্রচলিত আইন বিরোধী কোন কাজ কারো দৈহিক, মানসিক, সম্পদের ও আর্থিক ক্ষতি সাধন করলে আইনের চোখ তা অপরাধ। খুন, জখম, রাহাজানি, চুরি, ডাকাতি, নির্যাতন ইত্যাদি অপরাধের উদাহরণ। আইনের পরিভাষায় অপরাধের যুক্তিসঙ্গত এবং কার্যকরী সঙ্গা আছে তাই এ প্রসংগে আসছি না।

 ভুল ক্ষমাপ্রার্থী এবং ক্ষমাকারী, উভয় মহৎ চরিত্রের!

আমরা সবাই রক্ত মাংসে গড়া। আমরা কেউই সঠিক ভাবে কাজ করার ঐশ্বরিক ক্ষমতা নিয়ে জন্মাইনি। সুতরাং মানুষ হিসেবে কাজ কর্মে আমাদের ত্রুটি হবে, সেটাই স্বাভাবিক। প্রবাদ আছে, মানুষ মাত্রই ভূল করে। এটা সত্য যে, ভুল আমাদের ক্ষতির কারণ। আবার আমরা ভূল থেকে ভবিষ্যতের কাজগুলো সঠিক ভাবে করার জন্য একটি শিক্ষা পাই। তার মানে এ থেকে শুধু ক্ষতি নই, ভালো কিছুরও সৃষ্টি হয়। আমরা সবাই যে ভুল করেছে, তাকে ভুলের জন্য শাস্তি দিতে চেষ্টা করি। এটি একটি খারাপ অভ্যাস। যে ভুল করে বিভিন্ন ভাবে তারও কিন্তু ক্ষতি হয়। তাই এমন ক্ষেত্রে তাদের প্রতি যথাসাধ্য ক্ষমা প্রদর্শন করা উচিত।

আমরা সবাই সব সময় চেষ্টা করি ভুলকে অপরাধ বলে চালিয়ে দিতে। অনেকেই অপরাধকে ত্রুটি হিসেবে দেখতে সবাইকে প্ররোচিত করি, যা ঠিক নই। ধরুন, কেউ বাড়ী হতে অফিসের কোন কাজের জন্য শহরে যাচ্ছে। অনেক কাগজ পত্রের মধ্যে সে একটি প্রয়োজনীয় কাগজ বাড়ীতে ফেলে গিয়েছে। ফলে কাগজটির অভাবে দাপ্তরিক কাজে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে দাপ্তরিক সমস্যার জন্য সে কর্মকর্তার নিকট ভুল স্বীকার করল। কর্মকর্তা দয়া দেখিয়ে তার কাজটি করে দিলো। তিনি বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে না দেখে ইচ্ছে করলে ঐ ব্যক্তিকে আবার পরের দিন আসতে বলতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি এটাই এখানে তার ক্ষমা এবং মহানুভবতা।

কোন অফিসের, একজন অফিস সহায়ক বেআইনি ভাবে সাধারণ জনগনের নিকট হতে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা ঘুষ নেন। তিনি কিন্তু চাকুরীর নিয়ম অনুযায়ী নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। তারপরও তিনি জেনে শুনে অন্যায় ভাবে কাজের জন্য আসা লোকের কাছ হতে ঘুষ নেন। এটা তার একটা অপরাধ। সাধারণত অনিচ্ছায়, উদ্দেশ্যহীন ভাবে কোন কাজের ফলে মানুষের জান মাল বা স্বাভাবিক কর্ম বাধা প্রাপ্ত হলে তাকে ভুল বলে। আবার নিজে জানা সত্ত্বেও আইনগত ভাবে বৈধ নই এমন কাজ। যা মানুষের জান মাল বা স্বাভাবিক কর্ম প্রক্রিয়ার ক্ষতি সাধন করে তাকে অপরাধ বলে।

সুতরাং আমরা আমাদের আলোচ্য বিষয় ভুল এবং ক্ষমাতে আমরা সীমাবদ্ধ থাকবো। কোন ভাবেই ভুলের সাথে অপরাধের সংশ্লিষ্টতা আনবো না। সবচেয়ে বড় কথা হলো পুনরাবৃত্তি না হলে, কেউ ভুল করে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাকে ক্ষমা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে মহানুভবতা, দয়া এবং সহানুভূতি দেখিয়ে ক্ষমা করা উত্তম চরিত্রের অধিকারীর কাজ। এ ক্ষেত্রে উভয় ব্যক্তির চারিত্রিক মহানুভবতা প্রকাশ পায়। অনেকেই কোন কাজে ভুল করে, ক্ষমা চাইতে লজ্জাবোধ করেন। এতে লজ্জা নই বরং চারিত্রিক গুনাবলীর উত্তম দিক প্রকাশ পায় নিঃসন্দেহে। তাই এ ক্ষেত্রে শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা উভয়েরই প্রাপ্য।

Leave a Reply