বাঁশ দেবার জন্য, সোস্যাল মিডিয়ায় অনেক বন্ধু চরিত্র!

বাঁশ দেয়ার গল্পের চরিত্রে, সোস্যাল মিডিয়ায় আমরা এক অভিনেতা!

বাঁশ দেয়ার গল্পের চরিত্রে, সোস্যাল মিডিয়ায় আমরা। হয়তো অবাক হচ্ছেন এই ভেবে, এ আবার কেমন কথা। হাঁ নিতান্তই কথা বাস্তব এবং আমি শুধুমাত্র আমার ক্ষেত্রে হাতে কলমে প্রমাণ পেয়ে তবেই বিষয়টির উপর দু কলম লিখতে বসেছি। মূল প্রসংগে আসি, আমি একটি ফেসবুক পার্সোনাল এ্যাকাউন্ট চালাচ্ছি প্রায় পাঁচ বছর হলো। এ এ্যাকাউন্টে দুটো পেজও আছে। পাতায় না হলেও আমি নিয়মিত মুল এ্যাকাউন্টে কিছু লেখার চেষ্টা করি। আর হাতে কলমে শিক্ষা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা সেখান থেকেই পেয়েছি।

বাঁশ দেয়ার গল্পের চরিত্রে, সোস্যাল মিডিয়ায় আমরা এক অভিনেতা!

ধর্মের নামে বাঁশ দেয়া ও বিদ্বেষ সৃষ্টি। পোষ্টে বিভিন্ন সস্তা উপায় অবলম্বণের মাধ্যমে ভিজিটরকে লোভ দেখানো। বা শেয়ার কমেন্টে আগ্রহী করে তোলা। দেহের অতি নগ্নতা উপস্থাপন, বিভিন্ন হাস্য রসের অবতারণা। রাজনীতি সংক্রান্ত বিষয়, ধর্মগত ভেদাভেদ সহ বিতর্ক সৃষ্টি করে এমন বিষয়গুলো সংগত কারণে সযত্নে পরিহার করছি। একই সাথে বিভিন্ন উক্তি বা বাণী তুলে ধরে অথবা নকল করে নিজের অতি সামান্য সৃষ্টিশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পথ এড়িয়ে চলছি। এমন ভাবে আপনি সখ এবং মোটিভেশন বিষয়ে লেখার জন্য একটি ওয়ার্ডপ্রেস সাইট খুলতে পারেন। বন্ধুত্বের বাইরে মোটিভেশনাল গ্রুপে যুক্ত থাকলে গ্রুপ পোষ্টে বেশ ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

বাঁশ দেয়ার গল্পের চরিত্রে, সোস্যাল মিডিয়ায় আমরা এক অভিনেতা!

উপরে বিষয়গুলো তুলে ধরার কারণ হলো। আমার ব্যাখ্যায়, বাঁশ দেবার সাথে বিষয়গুলো নিবিড় ভাবে জড়িত আছে। ফেসবুকে আমার বন্ধুর সংখ্যা প্রথমে ছিল মাত্র হাতে গোণা কয়েকজন। তারপর পরিধি আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এবং প্রায় পনের শ এর কাছাকাছি পৌঁছে যায়। উচিত এবং স্পষ্ট কথার কারণে সে সময় আমি বেশ কিছু বন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ্য হই। এর পরই হু হু করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসতে থাকে। এবং বন্ধুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়, প্রায় পাঁচ হাজারে পৌঁছে যায়। যাদের কিছু ছিল সখের বসে বন্ধুত্ব বাড়ানো আর বাকী সবটাই ছিল সকলের অন লাইন ব্যবসার প্রক্রিয়া।

বাঁশ দেয়ার গল্পের চরিত্রে, সোস্যাল মিডিয়ায় আমরা এক অভিনেতা!

আস্তে আস্তে ফেসবুকে বন্ধুদের বিভিন্ন জন বিভিন্ন ধরণের উপার্জনের কৌশল প্রদর্শন করতে শুরু করল। যেমন কেউ কেউ সোস্যাল মিডিয়ায় সবার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। লাইক পাবার আশায় বুক বা লজ্জাস্থান প্রায় নগ্ন করে বহু ছবির মাধ্যমে প্রদর্শন করছেন। কেউ আবার দিনে বহু পোষ্ট দিয়ে ধর্মের বাণী শোনাচ্ছেন। ভাব খানা এমন তার মত ভালো নির্ভেজাল মানুষ আর জগতে যেন একটিও নেই। অনেকে ছ্যাঁকা খেয়ে বোকা হওয়ার বিরহ ব্যাথার বিবরণ তুলে ধরছেন। কেউ কেউ বাঁশ দেবার জন্য সরকার, প্রশাসন বা শাসন ব্যবস্থার দোষ ধরে সমালোচনা এবং উস্কে দেয়ার পোষ্ট নিয়ে আছেন। একই সাথে রেন্ট এ কার, শাড়ী, থ্রী পিচ, মাছের পোনা, আম, লিচু, ব্লক বাটিক। ট্রাক ভাড়া, ইত্যাদির প্রচার ও প্রসারের জন্য অবিরত পোষ্ট দিয়ে চলেছেন।

বাঁশ দেয়ার গল্পের চরিত্রে, সোস্যাল মিডিয়ায় আমরা এক অভিনেতা!

এ সব কিছুই অন লাইন ব্যবসার ফঁন্দি এবং আমি কোন ভাবেই এর সবগুলোকেই খারাপ বলছি না। আবার এতো কিছুর মাঝেও জানার জন্য, সংবাদের অংশ, দরকারী এবং বস্তুনিষ্ঠ পোষ্টও আছে। বাঙ্গালীরা ফ্রিতে পেলে যেমনে আঁলকাতরা খায়, তেমন ফ্রিতে বাঁশ ও দেয়। বন্ধুর সংখ্যা এবং আধিক্যের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত। আমাদের সব সময়ই ভালো কিছুতে এ্যালার্জি হলেও অন লাইন জগতে একজন আর একজনের সাথে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ আপনি বুনো ওল হলে আমি বাঘা তেঁতুল, এর মত। আপনি বা আমি যদি মনে করি সব বন্ধুই আমার পোষ্টে লাইক করবেন, কমেন্টস করবেন, শেয়ার করবেন। আমি হু হু করে সোস্যাল মিডিয়ার মার্জিন লাইন পার হয়ে যাব।

আর আমি কারও বস্তুনিষ্ঠ পোষ্টে লাইক, কমেন্টস্ বা শেয়ার না করে বাঁশ দেব। তা হলে নিশ্চিত ভাবেই আমি বোকা ছাড়া কিছু নই। কারণ কারও হাত ধরেই আমি এ মাধ্যমে অনেকের সাথে যুক্ত আছি। এখানে আমি না চাইলেও অনেকটা বাধ্য হয়ে আমার, অন্যকে অবশ্যই মুল্যায়ন করতে হবে নতুবা আমি সোস্যাল মিডিয়া থেকে। অন লাইন উপার্জনের জগত থেকে ছিটকে পড়ে যাব এবং বাঁশ পাব নিশ্চিত। তবে অনৈতিক বা নীতি বিরুদ্ধ কোন কিছুতেই সায় দেয়া যাবে না। এটাও মনে রাখতে হবে। একই সাথে আত্মীয় বা পরিচিত পরিজনের সাথে যোগাযোগও রক্ষা করতে হবে। মোট কথা শুধু মাত্র নিজের লাভ বা লোভ করা জন্য সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকা নই।

অন্যায়, অতি লোভ এবং স্বার্থপরতাকে বেশী প্রশ্রয় দেয়া উচিত নই, যথা সাধ্য প্রতিবাদ করা যুক্তিযুক্ত। এই ধারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি নিজে একটি প্রাইভেট ব্রাউজারের মাধ্যমে বন্ধুবেশী আবর্জনাকে চিহ্নিত করেছি। প্রতিক্রিয়াশীল বন্ধু এবং পরিচিতদের রেখে এমন সুবিধাবাদীদের আনফ্রেন্ড করে বন্ধুর সংখ্যা পাঁচ হাজার থেকে দুই শততে নামিয়ে এনেছি। বলা বাহুল্য এ প্রক্রিয়াটি চলমান থাকবে। জানি, ভালো এবং উচিত কথা আমাদের সহ্য হয় না। তারপরও আমার পথ অনুসরণে অনেকেরই সুফল আসবে আমার বিশ্বাস। যারা বিচক্ষণ তাদের বিচারে আমার এ লেখা স্বার্থকতা পাবে এবং তলে তলে বাঁশ দেবার বিষয়টি বুঝবেন আশা করছি।

Leave a Reply