প্রসূতি মহিলা বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবসার প্রধান পণ্য!

প্রসূতি মহিলা বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবসার প্রধান পণ্য!

প্রসূতি মা যেন বর্তমানে কসাই এর অস্ত্রের নিচে এক খন্ড মাংসপিন্ড! কথাটি শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই ব্যস্তবতা। কারণ এখন সন্তান সম্ভবা প্রায় সব নারীকে সিজার করা হচ্ছে। বাচ্চা হবার ক্ষেত্রে এখন আর কেউ ঝুকি নেয় না। দুই দশকে দেশের জন সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থারও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ফলে আগের তুলনায় চিকিৎসার অভাবে প্রসূতি মা এর মৃত্যু হার অনেক কমে গেছে। সরকারের বাস্তবমুখী চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের কারণে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য হয়েছে। রাস্তা ঘাটের উন্নয়নে যাতায়াত সুবিধা, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সক্রিয় কর্মসূচীর ফলে প্রসূতি মৃত্যুর হার কমে গেছে।

প্রসূতি মহিলা বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবসার প্রধান পণ্য!

আগের তুলনায় বর্তমানে প্রসূতি মায়েদের মৃত্যু হার কমে গেলেও তাদের প্রকৃতি প্রদত্ত শক্তি কমে গেছে। এই কারণে সন্তান প্রসবে তারা প্রাকৃতিক শক্তির প্রয়োগ করতে পারেন না। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ঔষধ, ফরমালিন ইত্যাদির প্রভাবে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার খাবারগুলো গুণগত মান এবং প্রাকৃতিক শক্তি হারিয়েছে। ফলে প্রসুতি মায়ের প্রকৃতি প্রদত্ত সন্তান প্রসবের যে ক্ষমতা কমে গেছে। অনেক সচেতন পরিবার আগেই মা ও সন্তানের জীবনের কথা ও সার্বিক মঙ্গল বিবেচনা করেন। তাই তারা প্রসুতি মা কে হাসপাতালে ভর্তি করান। সন্তান প্রসবের সময় যতই কাছাকাছি হয়, গার্জিয়ানরা ততোই সংকিত হন। তারা সন্তান প্রসবের কিছুদিন আগেই ডাক্তারের পরামর্শে প্রসূতি মাকে স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করান।

প্রসূতি মহিলা বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবসার প্রধান পণ্য!

আসল সমস্যার শুরু হয় ক্লিনিকে ভর্তি করা থেকে। প্রসূতি মায়েরসন্তান প্রসবের ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। এ দেশের শতকরা নব্বই ভাগ মানুষই হয় মধ্যবিত্ত নতুবা দরিদ্র। আবার স্থানীয় সব জায়গায় সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কমতি আছে। তাই সবাই প্রসূতি মা এবং সন্তানের জীবনের ঝুঁকির কথা চিন্তা করে তাকে ক্লিনিকে ভর্তি করান। কিন্তু বাস্তবে উল্টা চিত্র দেখা যায়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সিজার করার জন্য অস্থির হয়ে থাকেন। এখান থেকে একটা পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। ক্লিনিকে ভর্তি, ঔষধ কেনা, টেস্ট ইত্যাদিতে রোগীর পরিবারের প্রচুর অর্থ খরচ হয়। এভাবে সন্তান সম্ভবা নারী চিকিৎসা ব্যবসার পণ্যে পরিণত হচ্ছে এবং পরিবারকে অর্থ গুণতে হচ্ছে।

আবার সব প্রসূতি নারীর ক্লিনিকে গিয়ে সন্তান প্রসবের বিষয়কে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা উচিত না। যে ক্ষেত্রে মা বা সন্তান অথবা উভয়ের জীবন সংশয় হতে পারে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সিজার করতে হবে। তবে তা নির্বিচারে নই। দু একটা ব্যতিক্রম ছাড়া ক্লিনিকে সন্তান প্রসবের পরিসংখ্যান বিবেচনা করে দেখুন। প্রতি দশ জন মা এর মধ্যে নয় জনকেই সিজার করা হয়। চিকিৎসা সেবার নামে অর্থ উপার্জনের জন্যই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ এমনটা করে থাকেন। চিকিৎসা সেবার নামে এ মহান পেশা থেকে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের নীচ কৌশল বাদ দেয়া জরুরী। সিজার করার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে তবেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া উত্তম।

সব প্রসূতি মায়ের সন্তান গর্ভে ধারণ, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাতৃগর্ভে থাকার বিষয়টি প্রকৃতিগত। এবং একই সাথে সন্তান প্রসব ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তার দান। তাই জীবন সংশয়ের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে শুধু কয়টা টাকার জন্য কারও সিজার করা উচিত নই। এতে একটি পরিবার যে পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তা বিবেচনায় আনতে হবে। এমনিতেই প্রাকৃতিক নিয়মে সন্তান জন্ম না নিলে স্বাস্থ্যগত, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, বুদ্ধিমত্তার বিকাশে বেশ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। তাই একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। স্বাভাবিক ভাবে সন্তান প্রসবের প্রক্রিয়াকে সুযোগ দিন। যদি স্বাভাবিক নিয়মে সন্তান প্রসব না হয় তবেই সিজারের মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিন।

Leave a Reply