অন্যের দোষ না খুঁজে নিজেকেই সংশোধন করা বরং উত্তম!

অন্যের দোষ না খুঁজে নিজেকেই সংশোধন করা বরং উত্তম!

অন্যের দোষ ধরা খুবই সহজ। তবে অন্যের দোষ না ধরে নিজেকে সংশোধন করা উত্তম কাজ। আমাদের মাঝে অনেক বড় পাপী এবং খারাপ লোক ছড়িয়ে আছে। নিজেকে খারাপ ভাবুন, তার কারণ আছে! নিজেকে খারাপ ভাবলে অন্যকে মূল্যায়ন করা সহজ হয়। হয়তো এ মুহুর্তে কারও মধ্যেই বড় পাপ নেই। তবে স্বার্থের খাতিরে আমরা যে অমানুষ এবং পশুতে পরিণত হবো না তারই নিশ্চয়তা কি। অন্যের দোষ ধরা আজকাল আমাদের স্বভাব দোষে পরিণত হয়েছে। আমরা অন্যের সমালোচনা করতে এবং তাকে সহজেই দোষী করতে পারি। অথচ তারা আমাদের নিয়েই উল্টো ভাবে! আমাদের নিজেদের প্রতি মিথ্যা আত্মবিশ্বাস বেশী। তাই অন্যরা পিছনে আমাদের বোকা ভাবে।

অন্যের দোষ না খুঁজে নিজেকেই সংশোধন করা বরং উত্তম!

তার এ কাজটি ঠিক হয়নি, এটা জঘণ্য অন্যায়। এটা অমানুষ ও বিবেকহীনের কাজ আমরা ইত্যাদি কথার ফুলঝুড়ি ছোটাই। কেউ কোন ছোট্ট কিছু অন্যায় করলেই হলো। সাথে সাথে আমরা দল বেঁধে তার পিছনে লেগে পড়ি। আর তার হাজারো অপরাধ বা দোষ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করি। আমরা তার পর্যায়ে থাকলে আসলে এর চেয়ে বেশী দোষ বা অপরাধ হতো নিঃসন্দেহ। গভীর ভাবে আমাকে বিশ্লেষণ করলে আমারই হাজারো দোষের পাহাড় জমে যাবে। অন্যের দোষ ধরে বা অপরাধ খুঁজে তাকে দোষী স্যাবস্ত করার আগে নিজের মনের আয়নাতে নিজেকে বিচার করা উচিত। নিজের চোখে অন্যের দোষ না ধরে নিজের সংশোধন জরুরী।

অন্যের দোষ না খুঁজে নিজেকেই সংশোধন করা বরং উত্তম!

আর নিজের ভুল বুঝলেও আমরা চোখ থাকতে অন্ধ এবং মন থাকতেও অবুঝ। কথায় আছে, নিজের ভালো পাগলেও বোঝে। আমাদের অবস্থা অনেকটা সে রকম। আমার দোষ বা ভূলগুলো আমি বুঝলে নিজের চেষ্টায় আমাকে সংশোধিত হতে হবে। ফলে অন্যের প্রতি অন্যায় করা, বিবেক অথবা নীতি বিরুদ্ধ কাজ করা থেকে আমাকে বিরত থাকতে হবে। সব দিক থেকে সঠিক পথে কোন কিছু অর্জন করা এতো সহজ নই। দিন রাত সমান করে পরিশ্রম বা কাজ করতে হয়। সেটা সময়েরও ব্যাপার। খারাপ পথে কোন কিছু লাভ করার মতো এতো সহজ পথ আর দ্বিতীয়টি নেই। তাই আমরা এ সহজ পথই ধরি।

অন্যের দোষ না খুঁজে নিজেকেই সংশোধন করা বরং উত্তম!

আমি ইচ্ছা করে নিজের দোষ গুলো বের করে নিজেকে সংশোধন করবো না। আমাদের সমাজে চারপাশে তাকালে আমার মত এমন অনেক মানুষ পাওয়া যাবে। তারা বুদ্ধি করে নিজের দোষগুলো গোপন করেন। সমাজে আমার মত এ লোকগুলোই আপনার দোষ ধরবে। সমালোচনার মাধ্যমে আপনাকে পদে পদে বিপদে ফেলবে। এক সময় আপনি উপায় না পেয়ে আমার কাছে মুক্তির পথের বুদ্ধির জন্য আসবেন। আমিও ঠিক এমনই একটি সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকবো। এবার ছলে, বলে ও কৌশলে অন্যের কানে বিভিন্ন কুপরামর্শ দেব। আমি অতি ভালো মানুষ সেজে লাভবান হবো বা লাভবান হবার চেষ্টা করবো। আসলে এটাই আমাদের প্রকৃত চরিত্র।

অন্যের দোষ না খুঁজে নিজেকেই সংশোধন করা বরং উত্তম!

আমাদের সমাজে, কর্মক্ষেত্রে বা অন্যান্য জায়গায় হাজারো লোক পাওয়া আছে। যারা আপনার দোষ খুঁজে আপনাকে বিভিন্ন ভাবে উপদেশ দেবে। আপনার ক্ষতি করার জন্য উঠে পড়ে লাগবে। এ ক্ষেত্রে তাদের মুল লক্ষ্য হল আপনার দোষ থেকে লাভবান হওয়া। আপনার কাছে ভালো সেজে তারা নিজের অনেক খারাপ কাজ গোপন করবে। একটু উচু বা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকার ফলে তারা প্রায় ক্ষেত্রেই এ সুবিধা পেয়ে থাকেন। যেমন কোন অফিসের বড় কর্তা ভালো মানুষ হিসেবে সব সময়ই ধর্মীয় কাজের প্রতি অনুরাগী। সেই বড় কর্তাটি সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যে বলেন। তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অন্যের দোষ বের করেন। সমাজে এমন লোকের অভাব নেই।

অন্যের দোষ না খুঁজে নিজেকেই সংশোধন করা বরং উত্তম!

তিনি মালিকের কাছে সবার নামে কান কথা লাগান। আর মালিকের কাছে প্রচুর তোষামোদ করে নিজের ফায়দা লাভ করেন। এমন ব্যক্তিই আপনার কাছে এসে মিষ্টি মিষ্টি ভাষায় আপনাকে হাজারো নীতি কথা শোনাবেন। যেমন অন্যায় করবেন না, নিজের কাজ সততার সাথে করবেন। কারো কাছ হতে উপহার নিবেন না। সব সময় সৎ জীবন যাপন করবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। ধরুন এমন লেবাসধারী, মুখোশধারী ব্যক্তিটি আমিই। এখন আপনারা সবাই বিচার করুন, আমি কি আসলেই ধোঁয়া তুলসী পাতা! আমাদের চারপাশে এমন লোক এবং উদাহরণের ছড়াছড়ি। পরনিন্দা, পরচর্চা, অন্যের দোষ খোঁজা ইত্যাদি বাদ দিয়ে আমার মত এ মানুষগুলোর নিজেদের দোষ বের করা উচিত নই কি!

আমি যদি সঠিক হই বা নিজেকে মানুষ করি তবে নিজেকে সংশোধন করতে হবে। নিজের সংশোধন না করে অন্যের দোষ ধরা বা সমালোচনা করা উচিত নই। নিজে সঠিক পথে এসে তারপর কাউকে ভাল পরামর্শ বা উপদেশ দেয়া অনেক আনন্দের। নিজে সঠিক পথে থেকে অন্যের দোষ ধরলে ঐ ব্যক্তি খুশি হবেন। তিনি নিজেকে শুধরে নেবেন। এই যে বিভিন্ন দোষ ধরা, নীতিকথা বলা খুবই সহজ, বাস্তবে পালন করা খুবই কঠিন। দোষ, গুণ বা ভূল কম বেশী সবার মধ্যেই আছে। তবে সেটা সহনীয় মাত্রায় থাকা ভালো। সবার এমন চারিত্রিক বৈশিষ্ট থাকলে, কেউ কারও দোষ ধরবে না।

আমরা বেশীর ভাগ বাঙ্গালীই সাদামাঠা, অতিথিপরায়ণ এবং সরল মনের অধিকারী। আমাদের দেশের মানুষের মাঝে সরলতাটা বিশেষ করে বেশী। আর এ সরলতার জন্যই আমাদের দুঃখ কষ্টগুলো সবার সাথে শেয়ার করে, একটু হালকা হতে চাই। কিংবা উৎসাহ নিয়ে নিজের ভালো, মন্দ কাজগুলো মনের অজান্তেই কাউকে বলে ফেলি। আর স্বার্থপর, সুযোগ সন্ধানী মানুষগুলো আমাদের সরলতার সুযোগ নেয়। তারা আমাদের দোষ ত্রুটিগুলো বের করে ফায়দা লুটতে ব্যস্ত। আমাদের আশে পাশে হাতে গোনা বা গুটি কয়েক এমন ব্যক্তিদের কাছে আমরা অনেকটা অসহায়। তবে এদেরও ব্যক্তিদের উচিত নিজেদের দোষগুলো সংশোধন করে নেয়া। নিজেরা ভালো হয়ে তারপর আমাদের দোষ ধরার দায়িত্ব পালন করা উচিত।

সরলতা বৈশিষ্টটি ভালো এবং নিঃসন্দেহে উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট। তবে অতিরিক্ত সরলতা অনেক সময় আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। তাই সরলতা পরিহার করে কিছুটা কৌসুলী হওয়া উচিত। এতে সহজেই কেউ আমাদের দোষ ধরার সুযোগ পাবে না। আগে নিজে নিজেকে বিচার করার চেষ্টা করা উত্তম। কে ভালো বা মন্দ, কে বন্ধু বা শত্রু অথবা কে আপনার বন্ধুবেশী শত্রু তা জানা উচিত। একান্ত প্রয়োজন না পরলে কাউকেই নিজের মনের কথা বা একান্ত ব্যক্তিগত কথা বলা উচিত নই। এতে সুযোগ সন্ধানী, স্বার্থপর এবং দোষ থেকে লাভবান হবার চেষ্টায় থাকা নীচ মানসিকতার লোকের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব হবে। নিজের ভালো নিজেকে বুঝতে হবে!

একটা বিষয় উল্লেখ করা আবশ্যক তা হলো, জগতে সবাই খারাপ নই। সবাই নিজের খেয়ে আপনার দোষ ধরার জন্য বসেও নেই। অন্যের দোষ খুঁজে বের করে এমন লোক সংখ্যায় নগণ্য। কিন্তু তারা কৌশলে এগিয়ে। জগতে ভালো মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নই। সুতরাং সবাইকে এক পাল্লায় মাপাও ভূল হবে। মানুষের সুতরাং দোষ ত্রুটি বা ভূল থাকবেই। সব কিছু মানিয়েই আমাদের পথ চলতে হবে। প্রতিটি মানুষের একটি না একটি দুর্বল দিক আছে। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করা। আর এতে আপনার আমার ক্ষতির পরিমান অনেক কমে যাবে। স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ কথাটা মানতে কষ্ট হবে। কিন্তু এটাই সত্য এবং বাস্তব।

যারা অন্যের দোষ খোঁজেন এবং তা থেকে লাভবান হবার চেষ্টা করেন, একান্ত ভাবেই তারা নীচ প্রকৃতির। মানুষের দুর্বল বিষয়ে আঘাত করে এবং তা থেকে দোষ ধরে লাভবান হবার চেষ্টা ত্যাগ করা উচিত। একটা কথা, সবারই মনে রাখা দরকার। আজ আমি আজ যাকে ফাঁদে ফেলার জন্য গর্ত খুড়ছি, আগামীতে আমি সেই একই গর্তে পড়বো। এটা ধ্রুব সত্য, ফলাফল শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

Leave a Reply