
স্বার্থ বলতে যেখানে নিজের লাভ বড় করে দেখা হয়, ব্যবসায়ী মনোভাব পোষণ করা হয়। আর যিনি নিজের স্বার্থ বড় করে দেখেন তিনি স্বার্থপর। নিজেকে বিচার করলে বোঝা যায় আমি মানুষটা কেমন। পরিবারের বাইরে অন্যের সাথে অর্থের সম্পর্ক আছে। অথবা শুধু মাত্র নিজের সম্পর্ক আছে, নিজের এমন তিনটি দৈনন্দিন কাজকে বিচার করুন। তিনটি কাজের মধ্যে দুটিতে যদি বোঝা যায়। আপনি সাম্যবাদীর দৃষ্টিতে ঠিক আছেন। তবে আপনি এক জন ভালো মানুষ। আর যদি দুটি কাজে আপনি নিজের লাভ খোঁজেন, তবে আপনি স্বার্থপর। মন বিশ্লেষণের এ পদ্ধতিতে হয়তো অনেকে কষ্ট পাবেন, তবে এটাই বাস্তবতা। আসলে স্বার্থ জগতের সকল সমস্যার মূল।

প্রশ্ন উঠতে পারে, তা হলে জগত চলছে কি ভাবে? উত্তরে বলতে হয়, আমাদের মাঝে কিছু লোক আছেন যারা পুরোপুরি নিঃস্বার্থ, যদিও তারা সংখ্যায় কম। তাদের কারণে জগত এখনও টিকে আছে। আবার অধিকাংশ লোক মধ্যমপন্থী অবস্থানে আছেন অর্থাৎ লাভ বা স্বার্থপরতা দেখলেও আধা আধি ভাবে সমতা বিধান করে নেন। যেমন, কেউ কোন কাজের লাভ থেকে কিছু টাকা খুশী হয়ে কর্মচারীকে দিয়ে দেন। অর্থাৎ তিনি সব টাকা নিজে না নিয়ে অন্যকেও ভাগ দিয়েছেন, এটা তার আংশিক স্বার্থ নির্দেশ করে। একই সাথে এটা জাগতিক ভারসম্য রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। আবার খুব সামান্য হলেও তার মধ্যে সহানুভূতি বা সাম্যবাদী মনোভাবও আছে।

জগতে সকল স্বার্থপরতা এবং লোভের জন্য মুলত আমাদের তিনটি প্রধান চাহিদা নিবিড় ভাবে জড়িয়ে আছে। এক, দেহের ক্ষুধা বা পেটের ক্ষুধা। দুই যৌন ক্ষুধা তিন, মনের ক্ষুধা। এ তিনটি ক্ষুধা বা চাহিদার কারণে এতো লোভ, স্বার্থ ও স্বার্থপরতা সৃষ্টি হচ্ছে। দেহের ক্ষুধা ও যৌন ক্ষুধা সহজে মেটানো সম্ভব। কিন্তু মনের যে সীমাহীন চাহিদা বা ক্ষুধা তা মেটানো অসম্ভব। আমরা শুধু মাত্র প্রচন্ড মানসিকতার জোরে এর লাগাম টেনে ধরতে পারি মাত্র। কিন্তু পুরোপুরি থামানো অসম্ভব। লোভ, হিংসা, স্বার্থপরতা যাই বলুন না কেন, এ সব কিছু মনের ক্ষুধার কারণে সৃষ্টি হয়।

আমরা মানুষ হিসেবে সব সময়ই অন্যকে বিচার করতে অভ্যস্ত। এক বারও কিন্তু মনের ভুলে ভাবেন না, আপনি মানুষটা কেমন। যদি সব সময়ই আপনি নিজের মধ্যে স্বার্থ বা লাভ দেখেন। তা হলে আপনি স্বার্থপর এতে কোন সন্দেহ নেই। আপনার এ ব্যবসায়ী মনোভাব, নিজে বাঁচলে বাপের নাম, এ অর্থে ঠিক। কিন্তু আপনি মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক দূরে আছেন। মানুষ মানুষের জন্য, নিজের মধ্যে এ বোধ টুকু জাগাতে চেষ্টা করুন।