
শিশুর সরলতা, স্নিগ্ধতা ও কোমলতা যেমন, সবার হৃদয় তেমন হওয়া উচিত। শিশুরা কৈশরে পা দেবার আগ পর্যন্ত থাকে নিষ্পাপ, কোমল, সরল ও স্নিগ্ধ। প্রতিটি শিশুর মধ্যেই জাগতিক সকল সৌন্দর্য্য আছে। সব শিশুরা যেন নির্মলতার প্রতিচ্ছবি। শিশুদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে। জগতের সকল খারাপ রিপু ও বৈশিষ্ট তাদের অজান্তে শিশুর মধ্যে চলে আসে। ফলে কোমলতা, স্নিগ্ধতা ও সরলতা শিশুদের কাছ হতে আস্তে আস্তে দূরে সরে যায়। একটি শিশুর মধ্যে স্বার্থপরতাসহ সকল খারাপ বৈশিষ্ট বাসা বাঁধার পেছনে কিন্তু তাদের কোন হাত নেই। পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার অভাবের কারণে শিশুরা ধীরে ধীরে তাদের কোমলতা ও সরলতা হারিয়ে ফেলে।

দেখা যাক, কি ভাবে শিশুরা তাদের সরলতা সহ সকল অনুপম চারিত্রিক বৈশিষ্ট গুলো আমাদের জন্য হারিয়ে ফেলে। একটি ছোট্ট শিশুর সাথে তার মা খেলছে। তিনি শিশুটির সামনে একটা খেলনা এগিয়ে ধরছেন। শিশুটি হাত বাড়ালে তিনি খেলনা টি পেছনে লুকিয়ে ফেলে বলছেন, নাই, নাই! তিনি প্রায় অনেকক্ষণ ধরে শিশুটির সাথে এমন লুকোচুরি খেলছেন। শিশুটি এতে একই সাথে অস্থির, বিরক্ত এবং খেলনাটি খোঁজার জন্য উৎসুক হয়ে উঠছে। এখানে শিশুটির সাথে লুকোচুরী খেলা এবং নাই নাই বলা নীতি বহির্ভূত আচরণ।

আপনি অথবা আপনারা ভাবছেন এ ছোট্ট সাধারণ বিষয়ে কিইবা নিহিত আছে। লোকটা পাগল নই তো। না মশাই, তেমনটা নই। আমি শুধু একটি বিষয় কে গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণধর্মী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি মাত্র। আর সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা শেয়ার করার চেষ্টা করছি মাত্র। এখানে শিশুর সাথে মায়ের লুকোচুরী খেলাতে। খুব সুক্ষ্ম ভাবে হলেও তিনটি বিষয় শেখানো হচ্ছে। এক, কাউকে ধোঁকা দেয়া। দুই, কোন কিছুর প্রতি লোভ সৃষ্টি করা। তিন, কারও প্রায় প্রাপ্ত জিনিসকে ছিনিয়ে নেয়া। এবার বুঝুন কিভাবে শিশুর সরলতার মাঝে নিজের অজান্তে আমরা জটিলতা সৃষ্টি করছি।

আমরা বালক থেকে কিশোরে পা দেবার সাথে সাথে জাগতিক সকল কল্যাণকর গুনাবলী আমাদের নিজের কারণে কমতে থাকে। আমরা নিমজ্জিত হই স্বার্থপরতা, লোভ, ক্ষোভ, অহংকার, হিংসা ও সংকীর্ণতার বেড়াজালে। ফলে জগতে এতো চাওয়া পাওয়া, স্বার্থপরতা এবং দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। এক জীবনের জন্য মানুষ হিসেবে আমাদের সীমাহীন প্রয়োজনীয়তার আদৌ কোন দরকার নেই। শিশুর সরলতা, স্নিগ্ধতা ও কোমলতা হৃদয়ে ধারণ করে স্বার্থপরতা, লোভ, হিংসা ও অহংকার ছেড়ে। সুন্দর পৃথিবীতে সবারই সুন্দর ভাবে বাঁচার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভুমিকা পালন করা উচিত।