যুব সমাজকে দ্রুত ধ্বংস করছে মাদকদ্রব্য বা নেশাজাত দ্রব্য। মাদকের কারণে আজ তরুণ প্রজন্ম হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবার, সমাজ বা দেশের ক্ষেত্রেও মাদকের প্রভাব ব্যাপক। নেশার সেতু বন্ধন হলো ধুমপান। তরুণদের নেশার জগতে পা বাড়ার ক্ষেত্রে ধুমপান, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যাই দায়ী। তারা প্রথমে ধুমপান দিয়ে আসক্তির শুরু করে। তারপর আরো দুর্বার আকর্ষণ পাবার জন্য বড় নেশার পথে পা বাড়ায়। নেশাগ্রস্থের মধ্যে প্রায় সবাই যুব সম্প্রদায়। তাই এ জাতীয় নেশার হাতে খড়ি হয় বন্ধুর মাধ্যমে। মাদকদ্রব্য সেবনে প্রথমে সাময়িক মানসিক স্বস্তি এলেও এই নেশা এক সময় জীবনের জন্য মরণফাঁদ হয়। নেশাই এক সময় তরুণদের অপরাধ জগতে প্রবেশে বাধ্য করে।
যুব সম্প্রদায় মাদকের নেশাতে আসক্ত হয়ে কি কি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সেটা বোঝা দরকার। মাদক সার্বিক স্বাস্থ্যহানি ঘটায় এবং সৃজনশীল প্রতিভাকে ধ্বংস করে। মাদকের নেশা মন মানসিকতাকে বিপর্যস্ত এবং নষ্ট করে। সবার স্বপ্নকে অংকুরে বিনষ্ট করে যুব সমাজ নিজের ও পরিবারের আর্থিক ক্ষতি করে। লিভার ক্যান্সার, কিডনী ড্যামেজ, উচ্চ রক্তচাপ, পাকস্থলীর ক্যান্সার, হার্ট স্টোক, ডায়াবেটিস এবং ব্রেইন স্টোকের মত অসংখ্য রোগের জন্ম দেয়। যুব সমাজ নেশার দ্রব্য ক্রয়ের নিমিত্তে অর্থ সংগ্রহের জন্য অপরাধের পথে পা বাড়ায়। মাদক, অপরাধে জড়িয়ে সামাজিক ক্ষতি সাধনে বাধ্য করে নৈতিক অবঃক্ষয় ঘটায়। উদ্ভাবণী শক্তি নষ্ট করে পরিবার, সমাজ দেশের সার্বিক উন্নয়নে বাঁধা সৃষ্টি করে।
সমাজের অধিকাংশ অপরাধ সংঘটিত হবার প্রধান কারণ হলো মাদকাসক্তি। বর্তমান সময়ে সংঘটিত পারিবারিক ও সামাজিক অপরাধ জ্ঞানীজনদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছ। যুব প্রজন্মের মরণ নেশা মাদক সেবন তরতাজা তরুণদের মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব সব কিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিনষ্ট হচ্ছে স্নেহ, ভালোবাসা, মায়া মমতা ও সুন্দর পারিবারিক বন্ধন। আজ কাল বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে মা-বাবা, আত্মীয় স্বজন নির্মম ভাবে হত্যার শিকার হচ্ছেন। নেশাগ্রস্থ পিতা বা অভিভাবক মাদক সংগ্রহে করতে না পেরে স্বাভাবিক চিন্তা শক্তি হারিয়ে প্রিয় সন্তানকে খুন করছে। স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মারছে, মমতাময়ী মাকে জবাই করছে। আদরের সন্তানকে বিক্রি করার মতো জঘন্য অপরাধও করছে।
দেশে, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি বৃদ্ধির মুলে যুব সমাজের মাদকদ্রব্য সেবনই প্রধাণত দায়ী। আশির দশকের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘুমের ঔষধ, মদ, গাঁজা, আফিমে মাদকদ্রব্য সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে হেরোইন, ফেসিডিলে তা প্রসারতা লাভ করে। বর্তমানে পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারে উৎপাদিত ভয়ংকর মাদকদ্রব্য ইয়াবা যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। একই সাথে সিসা সেবন অথবা রাবারের মাধ্যমে সৃষ্ট মাদকতায় যুব সমাজ নতুন উদ্যোমতা পেয়েছে। বর্তমানে মাদকের সর্বনাশী থাবার তালিকায় ইয়াবা, সিসা সেবন প্রথম স্থানে রয়েছে। এ লেখায় যুব সমাজ বলতে নারী এবং পুরুষ উভয় শ্রেণী রয়েছে। মাদক দ্রব্য ব্যক্তিগত ভাবে মানুষ কে ধ্বংস করার পাশা পাশি পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি করছে।
সর্বনাশা মাদক দ্রব্য গ্রহণ করা মানে স্বেচ্ছায় এবং অকালে করুণ মৃত্যুকে বরণ করে নেয়া। মাদক দ্রব্য সেবন মানে নিশ্চিত ভাবে ব্যক্তি পর্যায় হতে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধ্বংস সাধন করা। স্নায়ু যুদ্ধে যারা পারদর্শী তারা আজ আর সরাসরি কোন দেশের সাথে যুদ্ধে জড়ায় না। কৌশলে তারা শুধু মাত্র সে দেশের ভিতর মাদক দ্রব্য বা নেশাজাত দ্রব্য ছড়িয়ে দেন। কারণ তারা জানেন, একটি দেশকে ধ্বংস করতে হলে, আগে সে দেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করা প্রয়োজন। ফলে সে দেশ অতি দ্রুত সার্বিক অবকাঠামো ভেঙ্গে নিজে নিজেই ধ্বংস হয়ে যায়। এমন প্রজন্ম ধ্বংসের পরিকল্পনায়, কতিপয় চোরা কারবারী সার্বিক সাহায্য করে।
তাই আগামী প্রজন্ম এবং যুব সমাজ কে রক্ষার তাগিদে মাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের সাথে সাথে সবারই একাত্মতা কাম্য। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি, পরিবার এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা বৃদ্ধিতে সকলকে ঐক্য হতে হবে। নিজেকে এবং দেশকে রক্ষার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদক দ্রব্য বা নেশাজাত দ্রব্য যুব সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। যারা নেশা করে তারা আসলে বাস্তবতা থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়, এটা মনে রাখা উচিত।