
মধ্যম লিঙ্গ, তাদের ব্যবহার এবং আমাদের মানবিকতা আজ প্রশ্নের মুখোমুখি। কারণ তারা আমাদের ভাই, বোন, সন্তান অথবা কারও আত্মীয়। যদি তাই হয় তবে কেন তাদের প্রতি আমাদের ঘৃণা। কেন এড়িয়ে চলার প্রবণতা, কেন বৈষম্যের দৃষ্টি তাদের উপর নির্মমতার কষাঘাত হানে। আমাদের নৈতিকতা ও দায়িত্ব না থাকলে শুধু নিয়ম করে মধ্যম লিঙ্গের আচরণ সংশোধন সম্ভব নই। মন থেকে সংশোধিত না হলে শুধু আইন করে হয়তো কিছুটা সময় বা ক্ষণিকের জন্য দমিয়ে রাখা যায়। কিন্তুু সমস্যার সমাধান হয় না। ফলে রাস্তা, ঘাটে, মাঠে বা যানবাহনে আমরা তাদের আপত্তিকর কথা এবং আচরণের শিকার হই। তাদের এমন আচরণের জন্য পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা দায়ী।

ঘটনা বেশ কিছু দিন আগের, দৈনন্দিন কাজ শেষে সিএনজি যোগে বাসায় ফেরার সময়ের। সিএনজি স্ট্যান্ড কয়েক জন মধ্যম লিঙ্গের সাথে আলাপ হলো। তাদের সাথে আমি একই সিএনজিতে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করি। এক সাথে গায়ে গা ঘেঁসে যাবো বলে তারা আশ্চর্য হয়েছিল। তারা যেমন মানুষ, আমিও তেমনি মানুষ। তাই তাদের সাথে যাত্রায় আমার বিব্রতবোধের কোন কারণ ছিল না। আশ্চর্য হয়েছি গন্তব্যে পৌঁছে আমার সিএনজি ভাড়া দেবার সময়। আমি ভাড়া দেবার আগেই, আমার আপত্তি সত্বেও তারা আমার সিএনজি ভাড়াও পরিশোধ করল।

এ ঘটনার বেশ কিছু দিন পরে, চা এর দোকানে এক মধ্যম লিঙ্গের ব্যক্তিকে দেখে কৌতুহল হলো। তার নাম জানতে চাওয়ার সুবাধে কিছু কথাও হলো। কথা বার্তার এক পর্যায়ে আমি তাকে চা পানের অনুরোধ করি। সে আমার সে অনুরোধ রাখল। কিন্তু আমি অনেক চেষ্টা করেও তার চা এর বিল দিতে পারলাম না। উল্টো সে আমার বিলও পরিশোধ করল। বিল পরিশোধের ব্যাপারে সে আমার কোন আপত্তি শোনেননি। উপরের ঘটনা দুটি নির্দেশ করে, মধ্যম লিঙ্গ সব সময় অমানবিক আচরণ করে না।

উপরের দুটো বর্ণনায় অনেকে হয়তো নাক সিঁটকাবেন। কারণ, সাধারণের দৃষ্টিতে মধ্যম লিঙ্গের পক্ষে সাফাই গাওয়া আমরা কেউই সহ্য করি না। একজন মানুষ অন্য কারো সাথে কেমন আচার আচরণ বা ব্যবহার করবেন। তা তিনি যতটা না বই পুস্তক এবং নিজের কাছ থেকে শেখেন তার চাইতে বেশী শেখেন পারিপার্শ্বিকতা থেকে। মধ্যম লিঙ্গের ব্যক্তিবর্গ সৃষ্টির অসমাপ্ত পরিবর্তনের শিকার মাত্র। সব ক্ষেত্রে তাদের অসামাজিক আচরণের মুল কারণ তারা নই। বরং তাদের জন্য কর্ম ক্ষেত্রের অভাব এবং আমাদের ঘৃণিত দৃষ্টিভঙ্গি।