পরকীয়া সামাজিক ব্যাধিতে নারীর চেয়ে পুরুষরা বেশী এগিয়ে। কথাটি পক্ষপাতিত্বের মত শোনালেও এটাই আমাদের সমাজে অতি বাস্তব চিত্র। বর্তমানে নারী পুরুষ উভয়ের পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার চিত্র অহরহ। তবে সংখ্যা বিচারে নারীদের চেয়ে পুরুষরা এ নোংরামীতে বেশী এগিয়ে আছে। আগে এক সময় পরকীয়া বিষয়টি শুধু মাত্র বিত্তশালীদের মধ্যে পরিলক্ষিত হতো। এখন তা সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিজাত থেকে শুরু করে দিন মজুর, কুলি, কামার, কুমার তাঁতি কেউ আর এ সামাজিক ব্যাধি মুক্ত নই। এ ব্যাপারে অনেক জ্ঞাণী, গুণী, বিদ্বান ও বরেণ্য ব্যক্তিগণ অন লাইনে, অফ লাইনে বিভিন্ন প্রত্রিকায় বহু লেখালেখি করেছেন। সে হিসেবে ধরলে আমার এই লেখা পুরাতনকে মনে করে দেয়া।
ধর্ম, আইন ও সামাজিক বৈধতা বিরুদ্ধ যে মনো দৈহিক সম্পর্ক তাকেই অল্প কথায় পরকীয়া বলে। অন্য ভাবে বলা চলে, এক জন বিবাহিত পুরুষ বা নারী, স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকার পরও অন্য এক জন বিবাহিত নারী বা পুরুষের সাথে। অথবা অবিবাহিত নারী, পুরুষের সাথে অনৈতিক দৈহিক বা তার কাছাকাছি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে তাকে পরকীয়া বলে। অতীত সময়ের তুলনায় বর্তমানে এ অনৈতিক সম্পর্কের সংখ্যা বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে বিভিন্ন প্রভাবের কারণে। বিভিন্ন কারণে যে কেউ যে কোন সময় এই সামাজিক ব্যাধিতে জড়িয়ে পড়তে পারে। আসুন, পরকীয়ায় আসক্ত হবার কারণগুলো একটু খুঁজে দেখার চেষ্টা করি।
পরকীয়া ব্যাধিতে আক্রান্ত হবার অনেক যৌক্তিক কারণ আছে। যেমন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সব সময় মনের বা মতের অমিল। যেখানে কারও কথা বা সিদ্ধান্ত অন্য জন মেনে নিতে পারে না। এটা স্বামী বা স্ত্রীর পারস্পারিক আকর্ষণ হ্রাস করে পরকীয়া আসক্ত করে। জৈবিক চাহিদা নিবৃত্ত না হওয়া বা স্বামী স্ত্রীর যে কারও মধ্যে উগ্র দৈহিক কামনা। পশ্চিমা সংস্কৃতি অথবা পার্শ্ববর্তী দেশের প্রভাবে এ জাতীয় চিত্র অহরহ দেখার ফলে, এমন অনৈতিক সম্পর্কের দিকে ছুটে যাবার সমুহ সম্ভাবনা আছে। পারিবারিক টানা পোড়ন বা অশান্তির কারণেও অনেকেই এ পথে পা বাড়ান।
একজন নারীর নিজের শরীরের প্রতি যত্নবান না হওয়া এবং সাজ সজ্জার অভাব এক জন পুরুষকে এ অনৈতিক সম্পর্কের দিকে আকৃষ্ট করে। অনেকেই হয়তো আমার কথায় দ্বিমত পোষণ করবেন। তবে নীচে লেখাগুলো বোঝার চেষ্টা করলে এ ভূর ধারণার অবসান হবে। নারী বা পুরুষ একে অপরকে দৈহিক ও মানসিক ভাবে সুখী রাখবে, আমরা সবাই এমটা আশা করি। এক জন বিবাহিত নারী সংসারে প্রবেশের পর শশুড় বাড়ী বা তার নিজ বাড়ীতে। বিভিন্ন সময়ে সংসারের কাজের কারণে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ও বসনে থাকেন। তার পক্ষে সংসারের সব কাজ বাদ দিয়ে স্বামীর মন রাঙ্গানোর জন্য পটের বিবি সেজে বসে থাকলে চলে না।
তাই তার বেশভূষা এলোমেলো, মানসিকতা রুক্ষ্ম, দৈহিক ভাবে ক্লান্ত ও সারা শরীর ঘর্মাক্ত থাকে। উপরোন্ত রাতে স্বামীর সাথে একান্তে সময় কাটানোর পূর্বে সেই নারী যদি তার শরীরের নোংরা দূর না করেন। বা নুন্যতম সাজ সজ্জা না করেন তবে সেই স্ত্রীর প্রতি পুরুষের, বিছানায় ভালোবাসা ও কামনা জাগার চেয়ে বিরক্তি বেশী প্রকাশ পায়। এ বিষয়টি পুরুষকে অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট করে। স্বামী নিয়মিত তার স্ত্রীকে বিভিন্ন রুপে এবং বৈচিত্রে দেখে তার মধ্যে এক ধরণের রুচি বিরক্তি বা রুচি বিকৃতি ঘটে। ফলে সে অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। একই কথা একই ভাবে একজন নারীর বেলায়ও প্রযোজ্য।
সব চেয়ে বড় এবং মারাত্মক যে কারণ, তার জন্য মুলত পুরুষ দায়ী। স্ত্রীকে বিভিন্ন রুপে, বসনে এবং বিচিত্র স্বাদে ভোগ করে কর্মস্থলে গমনকালীন। একজন পুরুষ প্রতিনিয়ত সাজগোজ করা একটি মহিলাকে পরিচ্ছন্ন রুপে দেখে আকৃষ্ট হন এবং পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। আমি নিশ্চিত অফিসগামী এ মহিলা যদি তার আলুথালু পোষাকে এবং সাজগোজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতো তবে কোন পুরুষই বোধহয় পরকীয়া ফাঁদে পা দিতো না। আর একটি কথা, একটি মেয়ে কিন্তু সচরাচর খুব সহজেই অন্যের সংসারে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে ঢুকতে চান না। বা সংসারে আগুন জ্বালাতে চান না। এ ক্ষেত্রে একজন মহিলা মায়া, অনোন্যপায় বা অনেকটা বাধ্য হয়েই পরকীয়া তে জড়িয়ে পড়ে। সুতরাং পরকীয়া এর প্রবাদ পুরুষ, স্ত্রী নই স্বামী।
তবে পরকীয়া বা পরকীয়ার আগ্রাসী ভূমিকাতে নারী পুরুষের শতকরা হিসেব ধরলে নারীরা ৩ ভাগ এবং ৮ ভাগ এই দলে পড়ে। পরকীয়া নামক সামাজিক ব্যাধি কম পক্ষে তিনটি পরিবারের অশান্তির কারণ এবং একটি পরিবারকে সমুলে ধ্বংস করে দেয়। সুন্দর সাজানো গোছানো সংসার পুড়ে তছনছ হয়ে যায়। এ সামাজিক ব্যাধির কারণে হত্যা বা আত্মহত্যার মত ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। একই সাথে সামাজিক, পারিবারিক অবক্ষয় এবং মানসিক ভাবে অসুস্খ প্রজন্মের সৃষ্টি হচ্ছে। পরকীয়া নামক সামাজিক ব্যাধি হতে আমাদের সকলেরই দূরে থাকা উচিত। পশ্চিমা এবং অপসংস্কৃতি পরিহার করে, সামাজিক ও ব্যক্তি সচেতনতা বৃদ্ধি ও ধর্মীয় কর্তব্য পালনে এ সমস্যার উত্তোরণ সম্ভব।