নেতৃত্ব তো তাদের হাতেই যারা সুন্দর সোনালী ভবিষ্যতের বাস্তবায়নকারী! এ দেশের বেশীর ভাগ মানুষ আরাম প্রিয় এবং কর্ম বিমুখ। আমার ঘরে এক সন্ধ্যা বা একদিনের মত আহার ব্যবস্থা থাকলেই যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে আমার কাজই হলো অলস লোকের সাথে চায়ের দোকানে অথবা পাড়ার মোড়ে আড্ডা দেয়া। সাথে সমালোচনা ও পরচর্চা করা। শীতকালেে লেপ মুড়ি দিয়ে অলস সময় কাটানো। খাদ্য গ্রহণ এবং পরিবারের সাথে ঝগড়া ছাড়া আর কিছু করি না। এ বর্ননা শতকরা আশি জনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এমন অবস্থায় আপনি যদি নেতৃত্ব দিয়ে জোর করে আমাকে কাজে নিয়ে যান তবুও কোন লাভ নেই। বাকী যারা আছেন তারা পরিশ্রম এবং কর্মে বিশ্বাসী।
যারা কর্মে বিশ্বাসী, অহংকার ও হিংসা বিবর্জিত এবং পরিশ্রমী। তারা নেতৃত্ব ছাড়াই শ্রম দিয়ে তাদের জীবনে সফলতা লাভ করে। সৎ ভাবে জীবন ধারণ এবং জীবিকা নির্বাহ অত্যন্ত কষ্টকর। এমন জীবন যাপনে বর্তমান সমাজে প্রায় সবাই এক বাক্যে আপনাকে খারাপ বলবে। অকারণে পিছনে আপনার নিন্দা করবে। যদি আপনি ব্যক্তিগত ভাবে এমন লোকদের প্রশ্ন করেন, আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি? কোন সন্দেহ নেই তারা আপনাকে কোন সঠিক উত্তর দিতে পারবে না। কিন্তু চিলে কান নিয়ে যাবার মত অন্যের নেতৃত্ব মেনে তালে তাল মিলিয়ে আপনি খারাপ, আপনি খারাপ শব্দের ফুলঝুড়ি ছড়াতে কার্পণ্য করবেন না।
জীবন চলার পথে নিন্দুকদের শত অপবাদ সয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারলে আপনি ভাগ্যবান। আপনার ভালো দেখে যাদের কারণ ছাড়াই হিংসে হয়, আপনার ভালোতে যাদের এলার্জি আছে তাদের উপেক্ষা করুন! তবেই আপনি সফলতা এবং উন্নতির সোনালী শিখরে পৌঁছার মত সাহসীদের একজন হবেন। শত কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করে যারা জীবনে সফল হয়েছেন তাদের কাতারে সামিল হওয়া খুব সহজ নই! হাতে গোনা অল্প সংখ্যক ব্যক্তিই অলসতা এবং কর্ম বিমুখতাকে তুচ্ছ করেছেন। তাই তারা ভবিষ্যত স্বপ্ন পুরুণের পথের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছেন। প্রয়োজনে আপনি তাদের পথ অনুসরণ করুন। চুড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য, নেতৃত্ব প্রদানের জন্য ভবিষ্যত স্বপ্ন পুরুণের ক্ষেত্রে চেষ্টার কোন বিকল্প নেই।
শুধু মাত্র অলসতা এবং কর্ম বিমুখতা আপনাকে নেতৃত্ব প্রদানের পথ হতে আস্তে আস্তে দুরে সরে নিয়ে যাচ্ছে। যদি আপনার মধ্যে স্পষ্টবাদীতা, সত্যবাদীতা এবং কারো জন্য ভালো কিছু করার মানসিকতা যদি আপনার মধ্যে না থাকে। তবে অন্যের জন্য ভালো কিছু করা অসম্ভব! সার্বজনীন কাজে সবার সাথে সম্মিলিত ভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার মানসিকতা আপনাকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। কারো ভাল কাজের সমালোচনা ও বিরোধীতা করলেই যে আপনি ভাল নেতৃত্ব দিতে পারবেন এমনটা নই! অনেকের অনেক কিছুই থাকতে পারে তাই দেখে হিংসা করার কোন কারণ নেই। আজ কোন ব্যক্তির বিপুল সম্পদ হয়তো তা তার পুর্বের কোন বংশের কঠিন পরিশ্রমের ফসল।
নেতৃত্ব দেয়ার আগে তত্ত্ব জানা এবং বিশ্লেষণ জরুরী। বিশ্ব বরেণ্য নেতারা অতি সহজে নেতৃত্ব পাননি। জাতির জন্য, দেশের জন্য, দশের জন্য তাঁরা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর অত্যাচারিত হয়েছেন। জেল খেটেছেন বছরের পর বছর, পরিবার পরিজনকে ত্যাগ করতে হয়েছে। বঞ্চিত হয়েছেন প্রিয়জনের সানিধ্য হতে। যারা তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য কঠোর পরিশ্রম এবং নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। তারাই তাদের ভবিষ্যত স্বপ্নকে বাস্তব রুপ দিতে সক্ষম হন। মানুষের কিছু কিছু ইচ্ছা খুবই প্রবল হয়, যা তারা স্বপ্নেও দেখে থাকেন। চেষ্টা থাকলে প্রায় সব স্বপ্নই পূরণ সম্ভব। তবে সে স্বপ্নকে হতে হবে বাস্তবমুখী, কোন অলীক কল্পনা নই। দেখবেন তা বাস্তবায়ন হবেই!
এক দরিদ্র কৃষকের সন্তান হয়ে, চেষ্টা করে পড়ালেখা করে একটা ভালো চাকুরী করার স্বপ্ন দেখা খুবই স্বাভাবিক। কারণ চাকুরী হতে উপার্জনের অর্থ দ্বারা আমি আমার দরিদ্র বাবা মায়ের আর্থিক কষ্ট দূর করবো। এ পদক্ষেপ বাস্তবমুখী এবং তার বাস্তবায়ন সম্ভব। কিন্তু একই অবস্থানে থেকে আমি যদি স্বপ্ন দেখি, চাঁদে বাড়ী বানানোর। সেখানে দরিদ্র বাবা মা কে নিয়ে সুখে-শান্তিতে থাকার! অথবা অজানা কোন দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে দেশ শাসন করার। তবে এ ক্ষেত্রে এসব স্বপ্ন অলীক কল্পনা এবং এর ভবিষ্যত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। অতএব নেতৃত্ব এবং উন্নতির এমন স্বপ্ন দেখা উচিত যার বাস্তবায়ন সম্ভব।
নেতৃত্ব অর্জন করলেই জীবনের সব চাওয়া পাওয়া পূর্ণ হয় না। বরং নতুন সমস্যার শুরু হয় এখান থেকেই। প্রবাদ আছে, নেতৃত্ব অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন, আসলেও তাই! নেতৃত্ব হবে মানবতার কল্যাণের জন্য, কারও ভালোর জন্য। একান্ত ভাবেই নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য নেতৃত্ব অর্জন কোন ভালো নেতার বৈশিষ্ট নই। এমন মানুষ খুব কম আছেন, যারা শুধু অন্যের ভালোর জন্য নেতা হন বা থাকলেও তা খুবই নগণ্য। আমরা শুধু মঞ্চের অভিনয় দেখেই মুগ্ধ হই। কিন্তু এ অভিনয়ের পেছনে কত লোক যে ব্যস্ত, কত ত্যাগ, কত শ্রম দিতে হয় তার হিসেব আমরা রাখি না। নেতৃত্ব এমনই, যা অর্জনের ত্যাগ ও কষ্ট আমরা বুঝিনা!
কেউ শুধু জনপ্রিয়তা পাবার জন্য নেতা হন, এ ধারণা বর্তমান যুগে অচল। আবার কেউ নেতৃত্ব দেন শুধুই মানুষের উপকারের জন্য, এটাও ভাবনার বিষয়। মানুষ মাত্রই স্বার্থপর, কেউ কম, কেউ বেশী! যার মধ্য একেবারেই স্বার্থ নেই আসলে তার মধ্যেও খুব সুক্ষ্ম আত্মস্বার্থ আছে। মুল কথা হলো ক্ষমতা, পরে উপকার। নেতৃত্ব নই আমাদের সবার মাঝেই কম বেশী ক্ষমতা পাবার ইচ্ছা আছে। ক্ষমতার বলেই নেতা নেতৃত্ব দেন ও উপকার করেন। আমরা সব সময়ই নিজেদের ভালো আগে বুঝি, তার পর অন্যের ভালো। এ নেতৃত্ব এর পেছনে, পর্দার আড়ালে, রাতের অন্ধকারের মত কত কাহিনী যে লেখা আছে তা শুধু সৃষ্টিকর্তা আর নেতাই জানেন।
আমার অনেক অর্থ সম্পদ বা প্রাচুর্য থাকলে, আমি চাইলেই এলাকা এবং এলাকার লোকের উপকার করতে পারি। সমাজ সংস্কারের কাজ, উপসনালয় তৈরী, রাস্তা মেরামত, বেকারত্ব দূর, গরীব দুঃখীদের দান ইত্যাদি। অথচ তা না করে নিজের পকেটের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে, মানুষের দরজায় দরজায় গিয়ে ভোট চেয়ে আমি নেতা হলাম। এটা কি শুধুই মানুষের ভালোর জন্য! না, প্রাথমিক ভাবে আমার লাভের জন্য পরে জনসেবা। আমি নেতৃত্ব এর মাধ্যমে যেমন অন্যের সেবা করছি একই ভাবে নিজের জন্য আত্মসেবাও করছি। সুতরাং নেতৃত্ব এর সাথে আত্মতৃপ্তি, মানব সেবা ও ক্ষমতার গভীর সম্পর্ক আছে।
নেতা বা নেতৃত্ব নিয়ে কথা হলেও নেতৃত্ব রক্ষার বিষয়ে এখনও কোন কথা হয়নি। অনেক কষ্ট, পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করে আপনি নেতা হলেন। ব্যাস, সাথে সাথেই আপনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত শুরু হবে। এক ধরনের স্বার্থপর মানুষ আপনার নেতৃত্ব এর সঠিক সুফল থেকে সর্ব সাধারণকে বঞ্চিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগবে! আপনাকে নেতৃত্ব থেকে নামানোর জন্য, আপনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন চক্রান্ত করা হবে। ছলে, বলে, কৌশলে আপনাকে নেতৃত্ব থেকে, ক্ষমতা থেকে অপসারণের চেষ্টা চলবে। কারণ সাধারণ মানুষ বা আপনি ভালো থাকুন, তারা কেউই তা চায় না! তাই তাদের ক্ষমতার লোভ এবং ষড়যন্ত্র বানচালের জন্যও আপনাকে অধিক সতর্ক থাকতে হবে।
আপনি যদি সর্ব সাধারণের মঙ্গল করতে চান এবং সে লক্ষ্যে সুন্দর সোনালী ভবিশ্বতের স্বপ্ন দেখেন এবং স্থির লক্ষ্য নিয়ে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেন। তবে কোন সন্দেহ নেই, নেতৃত্ব একদিন না একদিন আপনার হাতে আসবেই। তবে এর সাথে সাথে আপনাকে একটা কথা মনে রাখতে হবে তা হলো, নেতৃত্ব লাভ করা কঠিন কিন্তু তা রক্ষা করা আরও কঠিন। এক জন ভালো নেতা সব সময় চেষ্টা করেন অন্যের উপকার করতে। তেমন মানসিকতা আপনার মাঝে অটুট থাকলে নেতৃত্বের স্বাদ অনেক আত্মতৃপ্তির ও সুখের।