নিয়তি নির্ধারণ করে আত্মীয়, আর বন্ধুত্বের দায়ভার আপনার। বন্ধুত্ব গড়ে তোলা, যা একান্ত ভাবেই আপনার নিজের প্রয়োজনের এবং পছন্দের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। আত্মীয়তা আপনার ব্যক্তিগত জীবনে খুব বেশী প্রভাব না ফেললেও বন্ধু বা বন্ধুত্ব জীবনকে প্রভাবিত করে অনেক। আগের যুগে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে বন্ধুর খুব একটা ভূমিকা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীতে বন্ধু ছাড়া বড় একা একা লাগে সময় যেন আর কাটে না। স্কুল কলেজগামী ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে মধ্য বয়স পর্যন্ত আমাদের জীবনে যেন এখন বন্ধুত্বের ছড়াছড়ি। তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রচার ও প্রসারে বন্ধু এখন কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা দেয়া। বন্ধুত্ব জীবনে বেশী নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
উপরে আমার বলা কথাগুলো অনেকটা হাস্য রসের মত শোনালেও আমি ভূল কিছু বলছি না। একই সাথে আমি তথ্য প্রযুক্তিকে কোন ভাবেই দোষারোপ করি না। অজ্ঞতা, অসতর্কতা বা দায়ভার যাইই বলি, সবটাই আমাদের উপর বর্তায়, নিয়তি নই। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি এর বদৌলতে আমরা ঘরে বসেই বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করছি। যেমন তাবৎ দুনিয়ার খবর ও বিষয়াদি জানা। আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগযোগ, তথ্যের আদান প্রদান, শিক্ষা, চিকিৎসা গ্রহণ এবং আর্থিক লেনদেন করতে পারছি। একই সাথে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা সার্বিক যোগাযোগ রক্ষার সাথে অবারিত সম্ভাবনার মত বন্ধুর সংখ্যা বাড়িয়ে বাঁশ নিতে চলেছি। মুলত যত বিপত্তির সৃষ্টি হচ্ছে, এই বন্ধুত্ব থেকেই।
অন লাইনে না বুঝে, না জেনে অপরিনামদর্শীর মত বন্ধুত্ব সৃষ্টির ফলে। স্কুল কলেজগামী তরুণ তরুণীরা বিপথে পা বাড়াচ্ছে আশংখ্যাজনক হারে। এর মধ্যে অবৈধ কন্টেন্ট দর্শন ও শ্রবণ, নিজেকে আপত্তিকর ভাবে উপস্থাপন। জিম্মির বেড়াজালে বন্দী হওয়া, শ্লীনতাহানি, আত্মহত্যা, খুন ধর্ষণ ইত্যাদিতে তারা সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ছে। মধ্য বয়স্কদের মধ্যে পরকীয়ায় পড়ে পারিবারিক অশান্তি ও অধঃপতন সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক হারে। এরই ফলশ্রুতিতে সামাজিক অবক্ষয়ের সাথে পরিবারে আত্মহত্যা বা হত্যার ঘটনাও ঘটছে। নিয়তি নই নিজস্ব, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা, নৈতিক চরিত্রের সংরক্ষণ। ও যার যার ব্যক্তি সচেতনতা ছাড়া রাষ্ট্রীয় আইন এবং তার প্রয়োগ করে এসব রোধ করা সম্ভব নই।
আত্মীয় এর ক্ষেত্রে নিয়তি এর দায়বদ্ধতা থাকলেও বন্ধুত্বের দায় নিজের কাছে। বর্তমানে বাস্তবতার ভিত্তিতে নৈতিক ও মানসিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে বন্ধু বা বন্ধুত্ব বেশ নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। এ সংখ্যাটি বিশেষত তরুণ সমাজে বেশী লক্ষণীয়। সুতরাং বন্ধু নির্বাচনে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। একজন বন্ধু যদি কারো মন, ইজ্জত, এবং পরিবারের সম্মান নষ্ট করে তবে তেমন বন্ধু থাকার চেয়ে না থাকায় উত্তম!