তেল মারা বা তোষামোদ করা বর্তমানে যোগ্যতার চেয়ে বেশী কার্যকর। কি আশ্চর্য হচ্ছেন তো। এখন আমরা সবাই বিভিন্ন জনের কাছ হতে বিভিন্ন ভাবে তেল পাচ্ছি, একে বারে ঘানি ভাঙ্গা খাঁটি শরিষার তেল। শুধু তেল পেয়েই যদি শান্ত ও ক্ষান্ত থাকতাম তা হলে কোন কথাই ছিল না। যেমন তেল বা তোষামোদ আমরা পাচ্ছি তা দ্বিগুণ হারে অন্যকে আবার ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমরা যেন আজ তেলে তেলে মাখামাখি। উপরে মজার ছলে আমার বলা কথা গুলো রূপক হিসেবে আমাদের যোগ্যতা ও তোষামোদীর চিত্র তুলে ধরেছে। আগে এক সময় কর্মক্ষেত্রে বা সব কাজে যোগ্যতাকে একটি মাপকাঠি হিসেবে ধরে মুল্যায়ন করা হতো।
কিন্তু বর্তমানে আমরা কিন্তু আসলে তেমনটা দেখতে পাই না। ধরি দুই জন সহকর্মী পাশাপাশি টেবিলে চাকুরী করেন। এক জন তার পেশায় অত্যন্ত দক্ষ এবং স্বল্পভাষী। তিনি কাজে বিশ্বাসী এবং কম কথা বলার পক্ষপাতি। অপর জন ফাঁকিবাজ, গালগল্পে কাজের সময়টা পার করে দেবার চেষ্টা করেন। তিনি অন্যের সমালোচনা এবং চাটুকারিতায় সিদ্ধহস্ত। এই সহকর্মীটি সকাল বেলা অফিসে এসে কিছু সময় পর বসের কেবিনে যান। সেখানে তিনি বসের কাছে অন্যের বিভিন্ন দোষ ত্রুটির ফিরিস্তি দেন। বস কথার প্রসংগে কোন বিষয়ে কথা বললে, সেটা ন্যায় সংগত হোক অথবা না হোক সরাসরি প্রশংসা এবং সমর্থন করেন।
একই সাথে তিনি কৌশলগত পন্থার অংশ হিসেবে। বিভিন্ন উপলক্ষ্য ও আনুষ্ঠানে সেই বসের বাসায় স্বপরিবারে বেড়াতে যান এবং সেই সাথে হাতে কিছু না কিছু উপঢৌকন থাকে। বস এবং তার পরিবার এ কর্মচারীর প্রতি মহা খুশি। অফিস সংক্রান্ত যে কোন সুযোগ সুবিধা আসলে। বস কোন চিন্তা ছাড়াই, তা এই কর্মচারকে দিয়ে থাকেন। এখানে যোগ্যতা সম্পন্ন এবং দক্ষ অপর কর্মচারীটি কিন্তু তোষামোদ বা তেল মারা এর কাছে ব্যর্থ এবং পরাজিত। এখন বিবেচনার ভার একান্ত ভাবেই আপনার উপর। তেল মারা এর কাছে যোগ্যতা আদৌ পরাজিত হচ্ছে কি না। আমি একটি উদাহরণ টেনেছি মাত্র। জগৎ সংসারে চলার পথে এমন হাজারো বাস্তব চিত্র আপনারা লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন।
একটা পর্যায়ে কোন একটা কর্ম ক্ষেত্র বা বিষয়ে সুযোগ পাবার জন্য যোগ্যতার খুবই দরকার হলেও পরবর্তিতে যোগ্যতা তার মুল্যমান হারিয়ে ফেলে। শুধু মাত্র তেল মারা এর কাছে। বিভিন্ন উৎপাদন মুলক সেক্টরে কাজ কে আজও প্রাধান্য দেয়া হয় এবং কাজের ভিত্তিতে পারিশ্রমিক নির্ধারিত হয়। তবে তা কমার্শিয়াল সেক্টরেই লক্ষনীয়। কাজে বা নিজের ক্ষেত্রে প্রশংসা পেতে সবাই ভালোবাসেন। তবে তার ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সীমা রেখা না থাকলে তা ব্যক্তিগত ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।