
জীবন নামক আসা যাওয়ার পথের বাঁকে প্রেরণা, সাহস, ভরসা এবং আশ্রয়ের জন্য একজন ভালো মানুষের একান্ত প্রয়োজন। মা, বাবা বা পরিবারের সবাই আমাদের কাছে একাধারে একান্ত আপনজন, প্রিয়জন এবং নিঃসন্দেহ ভালো মানুষ। আত্মীয় বা রক্ত সম্পর্কের বাইরেও কখনও কাউকে আমাদের প্রয়োজন পরে। যার উপর নিশ্চিতে নির্ভর করা যায়। আপাত দৃষ্টিতে এ প্রয়োজনীয়তার দরকার মনে হলেও চাওয়াটা কিন্তু অন্যায় নই। মানুষ হিসেবে আমাদের মাঝে যেমন অজানাকে জানার আগ্রহ অনেক তেমনি প্রত্যাশাও করি বেশী। ভালো মানুষের সান্নিধ্য কামনা করাকে অনেকে খারাপ বা বাঁকা চোখে দেখতে পারেন। সমাজের দৃষ্টিতে অস্বাভাবিক মনে হলেও গভীর ভাবে চিন্তা করলে এ চাওয়া বিতর্কের সৃষ্টি করে না।

আমরা সবাই প্রতিদিনের কাজে কম বেশী সমস্যার মুখে পড়ি। যেখানে তাৎক্ষনিক সঠিক সিদ্ধান্ত বা সময়োপযোগী পদক্ষেপ আমরা সবাই নিতে পারি না। এমন পরিস্থিতে পাশ থেকে কেউ যদি বলেন, এটা করেন। তাহলে কিন্তু আমাদের চিন্তা ভাবনা সঠিক ভাবে কাজ করে। এমন অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের পাশ হতে দশজন দশ রকমের বুদ্ধি বা পরামর্শ দেবেন। এমন মুহুর্তে আমরা বেশী সমস্যায় জর্জরিত হবার ফলে কোন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আমাদের কাছে তো এমন পরিস্থিতিতে মনে হবে সবাই সঠিক পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সবার পরামর্শই গ্রহণ করার জন্য আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অনেকেই সবার পরামর্শ গ্রহণ করে আর্থিক, শারিরীক ও মানসিক ক্ষতিগ্রস্থ হোন।

একই সাথে সে মুহুর্তের অনেক মুল্যবান সময় নষ্ট হয়। এখানে আমাদের সমস্যার সমাধান তো হয়ই না বরং আরো নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়। জটিল পরিস্থিতিতে সবাই খারাপ পরামর্শ দিচ্ছেন, আমি এমন কথা বলছি না। মাত্র দু একজন হয়তো আপনার ক্ষতি করার উদ্দেশ্য নিয়ে বুদ্ধি দিচ্ছেন। আপনার জীবন যুদ্ধে সবার দেয়া পরামর্শই যে বাস্তব সম্মত হবে এমন কোন কথা নেই। অনেকের মধ্যে হয়তো একজন আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিয়েছেন যাতে আপনি পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারেন। কিন্তু অনেক পরামর্শের ভিড়ে আপনি তার বুদ্ধি গ্রহণই করেননি। বাকি অন্যরা কোন গভীর চিন্তা না করেই আপনাকে পরামর্শ দিয়েছেন। যাদের বুদ্ধিতে আপনার জীবন আরও জটিল হবে।

পরামর্শ দাতার মধ্যে একজন ব্যক্তি যার মুল উদ্দেশ্য ছিল, আপনি যাতে সমস্যা থেকে বের হতে না পারেন। আবার কারও চেষ্টা, আপনি যেন বেশী করে সমস্যায় বা বিপদে পরেন সে ব্যবস্থা করা। এখানে এই ব্যক্তিটি আসলে সুযোগ সন্ধানী এবং স্বার্থপর। সে আপনার বিপদ থেকে ফায়দা লুটে নেয়ার মতলব করেছে। আমাদের জীবনে সমস্যা আসলে এমন মানুষ গুলো মতলব নিয়ে ক্ষতি করবে। এমন চিত্রই বাস্তবে দেখা যায়। আবার এমনও হতে পারে, এ ব্যক্তি কোন অজানা কারণে আপনাকে, আপনার উন্নতিকে মনে প্রাণে হিংসা করে। তাই যাতে আপনি আরো বিপদে পড়েন সে জন্য, সে আপনাকে পরামর্শ দিয়েছে।

আপনার জীবন এ আরো বেশী ক্ষতি হোক, সমাজে এমন কামনা করা লোকের অভাব নাই। তারা নোংরা এবং বিকৃত মানসিক তৃপ্তি লাভের জন্যও আপনাকে খারাপ পরামর্শ দিতে পারেন। অন্যের জীবন জটিল করার জন্য কেউ কেউ নিজের অর্থও খরচ করেন। উপরের বর্ননায় মাত্র একজন ব্যক্তির ভাল পরামর্শ আপনি নিয়েছেন, তবে অনেক পরে। তার আগেই আপনার জীবন সমূহ ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। পরবর্তীতে আপনি শুধু নিজেকে দোষারোপ এবং আক্ষেপ করেছেন। এই ভেবে, হায় আমি তার কথাটা আগে কেন শুনিনি। তাহলে হয়তো আমার এতো বড় ক্ষতি হতো না ইত্যাদি ইত্যাদি। বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে এখানে, যে মানুষটির পরামর্শে আপনি বিপদ বা সমস্যা থেকে রক্ষা পেয়েছেন তিনি ভালো মানুষ।

এখানে নয়জন নহে, উপকারী একজন ভালো মানুষেরই একান্ত প্রয়োজন। আমি আপনাদের সুবিধার্থে একটি উদাহরণ টানছি। ধরি আমার এবং আপনার মধ্যে কোন কারণে তুমুল ঝগড়া হয়েছে। পরিস্থিতি এমন রুপ নিয়েছে যেখানে হাতাহাতির মত ঘটনাও ঘটেছে। এখানে একজন ব্যক্তি আমাকে বলছেন, তুমি কম কিসে। সে অন্যায় করেছ, তোমরা সব ভাই মিলে তাকে আগে মারো এবং উচিত শিক্ষা দাও। এ ক্ষেত্রে বাহুবল বা শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ থাকলেও তা পরিস্থিকে আরো জটিল করে। আবার একজন বললেন, যাক যা হবার হয়েছে তোমরা আর ঝগড়া করো না। দুজন দুজনের হাত ধরে পরস্পরকে ক্ষমা করে দাও। এখানে এ ভালো মানুষের পরামর্শে পরিস্থিতি সম্পুর্ণ স্বাভাবিক , সুসম্পর্ক ঠিক ছিল।

আমাদের চারপাশে অনেক সুযোগ সন্ধানী, স্বার্থপর, লোভী এবং হিংসাপরায়ণ মানুষ আছে। তারা সর্বদা সুযোগের সন্ধানে তৎপর। কি ভাবে আমাদের বিপদে ফেলে নিজেদের ফায়দা লুটবে, সে চিন্তায় ব্যস্ত। আসলে এমন সব মানুষের ভিড়ে ভালো মানুষের খোঁজ পাওয়া অনেকটা ডুমুরের ফুলের মত। যার চরিত্র উত্তম, সবার জন্য সহানুভূতিশীল এবং পরোপকারী তিনি নিঃসন্দেহে ভালো মানুষ। বর্তমানে সমাজে যেখানে ভালো তেমন সব কিছুতেই আমাদের এলার্জি। সেখানে একজন ভালো মানুষ একেবারে বেমানান। তারা ভালো হলে কি হবে! জগৎ সংসারের মানুষ নামের অমানুষগুলো তাদের কখনই ভালো থাকতে দেবে না। একটার পর একটা সমস্যা ও ফাঁদে ফেলে ভালো মানুষের সাধারণ জীবন কে কঠিন করে তোলে।

বর্তমানে একজন ভালো মানুষ মানেই কঠিন জীবন। সংসারে সমস্ত অন্যায়, অনিয়ম, অবিচার, অমানবিকতা এবং স্বার্থপরতার বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করছেন। এমন অবস্থায় আপনি তার কাছ থেকে কতটুকু বাস্তব ভিত্তিক সাহায্য পাবেন সে বিষয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তার সাহায্য ও পরামর্শে আপনার জীবনে নতুন দিক ও গতি আসতে পারে। আপনার যাতে ভালো না হয়, সে দিকে হাজারো স্বার্থপর মানুষ সজাগ দৃষ্টি রেখেছে। আপনার জীবন আরও জটিল করার জন্য তারা চারপাশের ওঁত পেতে আছে। আপনার ক্ষতি করার জন্য সুযোগ সন্ধানী মানুষগুলোর কর্ম তৎপরতার কমতি নেই। স্বভাবগত হিংসায় পাগল হয়ে তারা আপনাকে বার বার বিপদে ফেলার চেষ্টা করবে।

যদিও বা ভাগ্য গুনে আপনি ভালো মানুষের সন্ধান পান তথাপি তার পাশাপাশি চলতে পারা আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। কারণ আপনার আশ পাশের মানুষ গুলো আপনাকে বাঁশ দিয়ে এমন ঠেলবে যে আপনি কোন রকমেই ভালো মানুষের আশ পাশ ঘেষতে পারবেন না। প্রয়োজনে তারা নিজের অর্থ খরচ করে হলেও আপনার ভালো মানুষের সান্নিধ্যে আসা প্রতিহত করবে। আপনার অনিষ্টের ধারা যাতে অব্যাহত থাকে সে জন্য ছল, বল অথবা কৌশল প্রয়োগের কোন ঘাটতি থাকবে না। এমন সব প্রতিকুলতা পেরিয়ে যদিও বা ভালো মানুষটির দেখা মেলে তখন সবাই আপনাকে এবং তাকে ঘিরে বিভিন্ন সব কুৎসা রটনা করবে।

একজন ভালো মানুষ যদি আপনার বিপরীত লিঙ্গের হয় তবে সমস্যা আরও বেশী। অর্থাৎ আপনি নারী হলে সে পুরুষ অথবা এর বিপরীত হলে, তো কোন কথায় নেই । কারণ তাকে এবং আপনাকে ঘিরে সন্দেহ করে সবাই নিশ্চিত নিন্দা করবে। এতে আপনারই মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে হবে। এ ক্ষেত্রে নিন্দাকারী কোন বিষয়ই বিবেচনায় আনবে না। এ সব তো গেল পারিপার্শ্বিক প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতার কথা। এ বার আসি ভালো মানুষকে চিনতে পারার বিষয়ে। আপনি কি আসলেই ভালো মানুষটিকে চিনতে পারবেন। এর নিশ্চয়তাও দেয়া সম্ভব নই। আর দশ জনের মত আপনিও তাকে সুযোগ সন্ধানী ভাবতে পারেন। জীবন এর সব দিকেই কম বেশী জটিলতা আছে।

বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই “আমি যা চাই তা ভুল করে চাই, আর যা পাই তা চাই না” এমনটাই এ জীবন এ হয়। তার মানে, কেউ চেয়ে পায় না, আর কেউ পেয়েও তা হারায়, এটাই বাস্তবতা। এর পরও যদি ভাগ্য গুনে আপনি ভালো মানুষকে চিনতে পারেন, তবে আপনার কপাল খুবই ভাল। ভালো মানুষের সঠিক দিক নির্দেশনায় জীবন কে গড়তে চেষ্টা করুন, তবেই আপনার হবে জীবন স্বার্থক ও ধন্য।