খেলাধুলা বা জীবন যুদ্ধে জয় পরাজয় এবং চড়াই উৎড়াই আছে। আমরা সব সময়ই আমাদের জন্য যা ভাল, সুখকর এবং মঙ্গলময় তা কামনা এবং পেয়ে অভ্যস্ত। সৃষ্টি ধ্বংস, জন্ম মৃত্যু ভাল মন্দ, দিন রাত, আকাশ পাতাল, সাদা কালো, জয় পরাজয় ইত্যাদি বিষয়গুলো স্বাভাবিক চলমান প্রক্রিয়া। আমরা যখন তা মানতে চাইনা ঠিক তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়। জন্মেছি যখন, তখন মৃত্যু আমার অনিবার্য। একটা জন্ম বা সৃষ্টিকে যদি আমি হাসি মুখে নিতে পারি। তবে মৃত্যু বা ধ্বংসকে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা আমার থাকতে হবে। এটা সত্য যে, খারাপ কোন কিছু মেনে নিতে আমাদের প্রচন্ড রকম কষ্ট হয়।
শুধু খেলাধুলা তে নই! প্রতিটি বিষয়েই যেমন সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। তেমন প্রতিটি অবস্থার বিপরীত অবস্থাও আছে। আমাদের সকলেরই তা মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকা উচিত। দক্ষতার একটি বিরাট ভূমিকা আছে! তবুও কোন খেলাধুলা বা প্রতিযোগীতায় আমি এক বার হেরে গেলে তা মেনে নিতে পারি না। যেন বিরাট সমস্যা হয়ে গেছে। এর আগে বহুবার খেলাধুলা তে প্রতিপক্ষকে একই অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে। সুতরাং তারা মেনে নিতে পারলে আমাদেরও হার মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকা উচিত। কথাগুলো শুনতে বেমানান লাগলেও এটাই বাস্তবতা। আর সব সময় বাস্তবতা মেনে নেয়ার মানসিকতা তৈরী হলে অন্ততপক্ষে লাভ না হলেও ক্ষতি নেই।
ধরি আমি ব্যবসায়ী এবং বরাবর ব্যবসায় লাভ করে আসছি। এমন অবস্থায় একবার হঠাৎ ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় আমি দিশেহারা হয়ে পড়লাম। আবার আপনার বাসায় কোন মুল্যবান কাঁচের জিনিস হঠাৎ করে কারও হাত থেকে পরে ভেঙ্গে গেল। বা কোন মুল্যবান জিনিস নষ্ট হয়ে গেল। সাথে সাথে আপনি হতাশ বা বিমর্ষ হয়ে পড়লেন। এমন ক্ষেত্রে মনকে বুঝানো উচিত। যে দুর্ঘটনা অন্যের হাতে হয়েছে তা আপনার হাতেও হতে পারত। আবার আপনার যে মুল্যবান জিনিসটি নষ্ট হয়েছে তা অন্যেরও হতে পারতো। এ ক্ষেত্রে অন্য কেউ সেটা সহ্য করতে পারলে আপনি কেন পারবেন না। আপনি বা অন্যের চেয়ে কম কিসে! নিজেকে শক্ত করতে শিখুন।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবার অকাল মৃত্যুতে। অথবা আমাদের একান্ত কোন প্রিয়জন এর বিচ্ছেদে আমরা একেবারে হতাশ হয়ে পড়ি। বিচ্ছেদের কষ্ট আপনার, আমার মত সবারই আছে। প্রিয়জনের অকাল মৃত্যুতে আমিও কষ্ট পাই। কারণ আমি বা আপনি কেউই যন্ত্রের তৈরী রোবট নই। কিন্তু শোকের অনুভূতি খুব বেশী এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে পরিনামে আপনার আমার ক্ষতি ছাড়া লাভ কিছুই হবে না। স্নেহের সন্তান বা অন্য কারও বিচ্ছেদ ব্যথ্যা সহজে মোছা যায় না। তাই বলে আমাদের একেবারে ভেঙ্গে পড়লেও চলবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে এ পৃথিবীতে কিছুই চিরস্থায়ী নই। যিনি বা যা চলে গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা আর ফেরত আনা যায় না।
জীবনের সব ক্ষেত্রে আপনার বা আমার ধর্য্য ধারণ করতে হবে। কৌশল এবং সহ্য করার পথ বেছে নিতে হবে। খারাপ পরিস্থিতিতে আমাদের শক্ত হতে হবে। প্রয়োজন হলে সংসারের হাল ধরতে হবে। উপরে বিভিন্ন অবস্থায় নিজের করণীয় তুলে ধরা হয়েছে। স্বার্থপরতা বা অন্য কোন কারণে আমাদের জীবনের একমাত্র অবলম্বণ বা আশা ভরসা ত্যাগ করতে হতে পারে। বা একমাত্র আশ্রয় নষ্টও হতে পারে। তাই বলে হাল ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না। বরং মনের মধ্যে জেদ বাড়াতে হবে। কেউ আপনাকে ছেড়ে ভাল থাকলে আপনিও তাকে ছেড়ে নিশ্চয় ভালো থাকবেন। এমন মনোভাব তৈরী করুন। হয়তো এতেই আপনার সার্বিক মঙ্গল হবে।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনি বাঁধা, পরাজয় এবং চড়াই উৎড়াই এর সাথে সব সময় যুদ্ধ করছেন। খেলাধুলা এর চ্যালেন্জ একটি উদাহরণ মাত্র। এসব কথা হয়তো আপনার মন মানতে চাইবে না, সেটাই স্বাভাবিক। আপনার নিজের সাধারণ বুদ্ধি দিয়ে বিচার করুন। আমরা শিশু কালে মনের ইচ্ছা মত হামাগুড়ি থেকে হঠাৎ হাঁটতে শিখিনি। এ জন্য সবাইকে অনেক চেষ্টা করতে হয়েছ। বার বার পড়ে গিয়েছেন, ব্যাথা বা আঘাত পেয়েছেন। কান্না করেছেন কিন্তু হাল ছাড়েননি। আবার চেষ্টা করেছেন, বার বার চেষ্টা করেছেন। তাই আজ আপনি দু পায়ের উপর দেহের সব ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারছেন। মনের ইচ্ছে মত যেখানে খুশি হেঁটে সেখানে যাবার আনন্দ উপভোগ করছেন।
কোন বাসের কাছে গিয়ে আপনি একবার বলুন তো! আমি কাছে এসেছি! এখন দয়া করে বাস মশাই আমাকে তুলে নিন! বাস কি কাগজের মত হয়ে আপনার পায়ের তালুর নীচ দিয়ে আপনাকে বাসের ভিতরে তুলে নেবে, নিশ্চয় না! আপনাকে কষ্ট করে নিজের দু পায়ের উপর ভড় দিয়ে তবেই, রেলগাড়ী, বাস বা অন্য যে কোন যানবাহনে উঠতে হবে। আপনার মা সামনে ভাত বেড়ে রেখেছেন খাবারের জন্য। আর আপনি ভাত তরকারীকে বললেন, আমার মুখে এসে ঢোঁক। আর সাথে সাথেই তা মুখের ভিতর চলে এলো, এমন কিন্তু হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে কষ্ট করে নিজের হাত দুটো ব্যবহার করে খাবার খেতে হয়েছে।
আপনি স্কুলে ভর্তি হলেন। কষ্ট করে পড়াশুনা করতে হলো না উল্টো স্কুলই আপনার কাছে আসলো। আর বছর শেষে মাস্টার আপনাকে পাস করে দিলেন, এমন হয় না! ঝড়, বৃষ্টি, রোদ, গরম, শীত ইত্যাদিকে তুচ্ছ করে স্কুলে গিয়েছেন। আরাম, ঘুম এবং খেলাধুলা কে তুচ্ছ করেছেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করে তবেই আপনি বছর শেষে স্কুলে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। আপনি অনেক বই পড়েছেন। অনেক ক্লাস পাড়ি দিয়ে অনেক বছরের সাধনার পরে কতো গুলো সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন। এ কারণে আজ একটা ভালো চাকুরী করছেন। আপনার প্রতিষ্ঠান আপনাকে কখনও এটা বলবে না। আপনার অফিসে আসার দরকার নেই মাস শেষে বাড়ীতে বেতন পাঠিয়ে দেয়া হবে।
আমার গরীব কৃষক বাবা পরিশ্রম না করে এমনি এমনি ফসল পেলেন, এমন কখনই হয়নি। আমার মাকে কষ্ট করে পরিবারের সবার জন্য খাবার তৈরী করতে হয়েছে। রম্য কাহিনীর মত আমাদের প্রত্যেকের হাতে যদি আলাউদ্দিনের চেরাগ থাকতো তবে হয়তো অসম্ভব ব্যাপারগুলো সম্ভব হতো। মোট কথা খেলাধুলা এর মত, জীবনের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আপনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংগ্রাম করছেন। পরিশ্রম ও সংগ্রামের মাধ্যমে সব বাঁধা অতিক্রম করে আসছেন। আপনি আমি সবাই খেলাধুলা এর জয়ের মত জীবনে সুখের জন্য সংগ্রাম করে চলেছি। জীবন যুদ্ধ, কর্মক্ষেত্র বা খেলাধুলা সর্বত্রই বাঁধা অতিক্রমের চ্যালেন্জ আছে। সেই চ্যালেন্জকে অতিক্রম করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
আমি এক অবস্থানে এক পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম বা যুদ্ধ করছি। আর আপনি সম্পুর্ণ অন্য পরিস্থিতি ও পরিবেশের মধ্যে থেকে ঠিক আমারই মত সংগ্রাম করছেন। যার লক্ষ্য জয় অথবা চড়াই উৎড়াই পাড়ি দেয়া। জীবনে জয় পরাজয়, হার জিত, সুখ দুঃখ, হাসি কান্না, ভালো মন্দ, আগমন প্রস্থান ইত্যাদি বিষয়গুলো একটি পর্যায় ক্রমিক প্রক্রিয়া মাত্র। এ সব পরিস্থিতির কোনটাই আমাদের জীবনে চিরস্থায়ী নই। শুধু মাত্র কিছুটা সময়ের জন্য স্থায়ী থাকে। অতএব খেলাধুলা এর মত জীবনেও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সবচেয়ে বড় কথা হলো খেলাধুলা বা জীবনে হার জিত, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি, হাসি কান্না, আনন্দ বেদনা, হতাশা উৎফুল্লতা ইত্যাদি থাকবেই। তাই বলে থামলে চলবে না। লক্ষ স্থির করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর বাস্তবতার আলোকে সত্য কথা হলো আর দশজনে যেটা পারবে আমি বা আপনিও সেটা পারবো। একটু কষ্ট বেশী হবে হয়তো, এই যা!